গর্ভপাত আইন সংশোধনের পক্ষে আইরিশরা: বুথ ফেরত জরিপ

আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাতের বৈধতা নিয়ে ঐতিহাসিক গণভোটের পর গণনা শুরু হয়েছে। বুথফেরত জরিপে জানা গিয়েছিলো এই আইনের পক্ষেই সমর্থন আসবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।

_101758299_mediaitem101758298

আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাত নিষিদ্ধ৷ তবে এবার, এই নিয়ম পালটে ফেলার লক্ষ্যে দেশটিতে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে৷ কিন্তু বর্তমানে গর্ভপাতের পক্ষে ও বিপক্ষে – এই দুই শিবিরে বিভক্ত গোটা দেশ৷ 

দ্য আইরিশ  টাইমস ও আরটিই জানায়, ৬৯ শতাংশ মনে করেন সংবিধানে গর্ভপাত বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা সংশোধন করা উচিত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকারও এর সংশোধন চান। তিনি বলেন, ‘আামরা নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি।’ স্থানীয় সময় ৯টার সময় ভোটগণনা শুরু হয়। শনিবার সন্ধ্যার সময় জানা যাবে চূড়ান্ত ফলাফল।

আরটিই’র বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী হ্যা ভোট দিয়েছে ৬৯.৪ শতাংশ। আর না ভোট দিয়েছেন ৩০.৬ শতাংশ।  আর ডাবলিনে ৭৯ শতাংশ সংশোধনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আইরিশ টাইমসের দাবি, সংশোধেনের পক্ষে ছিলেন ৬৮ শতাংশ। আর না ভোট দিয়েছে ৩২ শতাংশ। 

আইরিশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুসারে গর্ভপাতে প্রায় নিষেধাজ্ঞাই জারি হয়েছে দেশটিতে৷ একাধিক ঘটনায় গর্ভপাতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা গেলেও এখনও এ কাজ আয়ারল্যান্ডে বেআইনি৷ এর মধ্যে উল্লেখ করা যায় ১৯৯২ সালের একটি ঘটনা৷ ধর্ষিতা এক নাবালিকা যে সংবাদমাধ্যমে ‘এক্স’ নামে পরিচিত, সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় আত্মঘাতী হয়৷ তখনও প্রশ্ন ওঠে, গর্ভাবস্থা যদি মায়ের জীবনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তবে কেন গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া যাবে না?

আয়ারল্যান্ড এখন গর্ভপাতের পক্ষে ও বিপক্ষে দুই শিবিরে বিভক্ত৷ হ্যাঁ-পন্থিরা অষ্টম সংশোধনী বাতিলের দাবি তুলেছেন৷ আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখা করে বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন ন'জন আইরিশ মহিলা যুক্তরাষ্ট্রে যান ভ্রূণের পরিসমাপ্তি ঘটাতে৷ অন্যদিকে কমপক্ষে তিনজন আইরিশ মহিলা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বড়ি খেয়ে গর্ভের ভ্রূণকে নষ্ট করার চেষ্টা করেন৷ এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে আইনি রূপরেখা থাকা দরকার৷’

হ্যারিস ও তাঁর সহযোগীরা অষ্টম সংশোধনী বাতিল করে বিষয়টা পার্লামেন্টের হাতে ছেড়ে দিতে চান৷ অর্থাৎ পার্লামেন্টই ঠিক করবে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কী আইন হওয়া উচিত৷

গর্ভপাত বিরোধী গোষ্ঠীর আইনজীবী ক্যারোলিন সিমন্স বলেন, ‘‘অষ্টম সংশোধনী একজন চিকিৎসককে গর্ভস্থ শিশুর প্রাণ কাড়তে বাধা দেয়, এবং এই কারণেই আমরা এর পক্ষে ভোট দিয়েছি৷’’ তাঁর মতে, গর্ভস্থ শিশু থাকার জন্য মায়ের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে বা জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে, এমন প্রমাণ নেই৷ গর্ভপাতের ফলে সরাসরি ও পরিকল্পনামাফিক ভাবে একটি শিশুকে হত্যা করা হয়৷

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভ্যালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গণভোটের পর কী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে আয়ারল্যান্ডে৷ সরকার একটি খসড়া বিল প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হবে৷ কিন্তু লেও ভারাদকরের সরকারের পার্লামেন্টে এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন রয়েছে৷ পার্লামেন্টে বিল এলে ক্ষমতাসীন দল সব সদস্যকে মুক্ত মনে ভোট দিতে বলেছে৷ দ্বিতীয় শক্তিশালী গোষ্ঠী ফিয়ানা ফেল-ও একই অবস্থান নিয়েছে৷

সূত্র: বিবিসি ও ডয়চে ভ্যালে