মোদি আর ট্রাম্প প্রসঙ্গে যা বললেন অরুন্ধতী

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রসঙ্গে কথা বলেছেন স্বনামধন্য ভারতীয় মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায়। বুকারজয়ী এই লেখক বলেছেন, ট্রাম্প আর মোদি দু'জনই নিয়ন্ত্রণহীন। তবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আর আমলাতন্ত্র মোদির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যা ঘটেনি। অরুন্ধতী বলছেন, মার্কিন সমাজ-বুদ্ধিজীবী-সংবাদমাধ্যম সবার ভেতরেই মোদিকে নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, ভারতের ক্ষেত্রে যা অনুপস্থিত। সম্প্রতি প্রকাশিত দ্বিতীয় উপন্যাস মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস নিয়ে  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন অরুন্ধতী।  ‘বিবিসি নাইট’ নামের অনুষ্ঠানের পক্ষে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক ইভান ডেভিস।

অরুন্ধতী রায়

মোদিকে ট্রাম্পসহ অন্যান্য উগ্র জাতীয়তাবাদী বিশ্বনেতাদের থেকেও খারাপ মনে করেন কিনা, সঞ্চালক ইভান ডেভিসের এমন প্রশ্নের জবাবে অরুন্ধতী বলেন, পার্থক্যটা হলো, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে যদি বিবেচনা করেন, তো এটা ঠিক যে তিনিও নিয়ন্ত্রণহীন। তবে সমস্ত মার্কিন প্রতিষ্ঠানের তাকে ঘিরে উদ্বেগ রয়েছে। সংবাদমাধ্যম উদ্বিগ্ন, বিচারবিভাগ উদ্বিগ্ন, সেনাবাহিনী উদ্বিগ্ন। মার্কিন জনতাও চেষ্টা করছে তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে। বিপরীতে যদি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকান, তো দেখবেন সবাই মোদির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান বিচারপতির কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানান ভারতের সুপ্রিম কোর্টের চার জন বিচারপতি। সংবাদ সম্মেলনে ওই বিচারপতিরা বলেছেন, ভারতের প্রধান বিচারপতি  তার ব্যক্তিগত মর্জিমাফিক বিভিন্ন বেঞ্চে মামলা পাঠাচ্ছেন। তাদের দাবি, যেভাবে তিনি আদালত চালাচ্ছেন তা ভারতের গণতন্ত্রকেই হুমকির মুখে ফেলে দেবে। বিবিসির সঙ্গের সাক্ষাৎকারে একে ভারতের ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনা আখ্যা দেন।

মোদির শাসনামলে ভারতের বিপন্নতাকে তুলে ধরতে অরুন্ধতী সম্প্রতি কাশ্মিরে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর কথা তুলে আনেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে  কাঠুয়া অঞ্চলের যাযাবর মুসলিম বাকারওয়াল গোষ্ঠীর মেয়ে ছিলো ৮ বছরের ছোট্ট আসিফা। কাঠুয়ার উপত্যকায় ঘোড়া চড়ানোর সময় অপহরণ করা হয় তাকে। আদালতে দায়ের করা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সানজি রাম তার ভাগ্নে ও একজন পুলিশ সদস্যকে আশফিয়া নামের ওই শিশুকে অপহরণের নির্দেশ দেয়। নির্দেশ বাস্তবায়নের পর মন্দিরে আটকে রেখে তিন দিন ধরে একদল হিন্দু পুরুষ ধর্ষণ করে আসিফাকে। পরে মাথায় পাথর মেরে ও গলা টিপে হত্যা করা হয় তাকে।

অরুন্ধতী আসিফা ধর্ষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছিল। ‌’অভিযুক্ত ধর্ষকের’ পক্ষে মিছিলও করেছে স্থানীয় জনগণ। নারীরাও ছিলেন সেই মিছিলে। এটা সত্যিই আশঙ্কাজনক।