যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হতে উচ্চ ডিগ্রিধারী ভারতীয়দের ১৫১ বছর অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হতে আবেদন করা ভারতীয় নাগরিকদের গ্রিন কার্ড পেতে ১৫১ বছর অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে! যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস’ (ইউএসসিআইসি) গ্রিন কার্ডের জন্য জমা পড়া মোট আবেদনের সংখ্যা প্রকাশ করার পর ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কাটো ইন্সটিটিউট’ তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে, বর্তমানে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী এসব আবেদনের নিষ্পত্তি করতে হলে অস্বাভাবিক রকম দীর্ঘ সময় লাগবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করা মোট ভারতীয়র সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি।us-generic_625x300_1529147971999

১৫১ বছর অপেক্ষা করার বিষয়টি তাদের জন্য প্রযোজ্য তারা ‘উচ্চ ডিগ্রিধারী’ বিভাগে আবেদন করেছেন। ওই বিভাগ ইবি-২ নামে পরিচিত। অথচ দীর্ঘ সময় অপেক্ষার বিষয়টি তাদের জন্য প্রযোজ্য নয় যারা শুধু স্নাতক ডিগ্রিধারী। এমন কি দক্ষ পেশাজীবীদেরও অপেক্ষার প্রহর অতটা দীর্ঘ নয়। ইউএসসিআইসি জানিয়েছে ইবি-১ বিভাগে যারা আবেদন করেছেন তাদের অপেক্ষা করতে হবে ৬ বছর। ইবি অর্থ ‘এমপ্লয়মেন্ট বেজড।’ দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য ওই বিভাগ প্রযোজ্য। এমন আবেদনকারীর সংখ্যা ৩৪ হাজারের বেশি। তাদের সঙ্গে রয়েছেন পরিবারের ৪৮ হাজার সদস্য। ইবি-১ বিভাগের মোট আবেদনকারী ভারতীয়র সংখ্যা ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন।

শুধু স্নাতক সম্পন্ন করার পর যারা আবেদন করেছেন তারা ইবি-৩ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ‘কাটো ইন্সটিটিউট’ জানিয়েছে, এমন আবেদনকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি পেতে ১৭ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগতে পারে। এপ্রিলের ২০ তারিখ পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ভারতীয় ওই বিভাগে আবেদন করেছেন। আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্যদেরসহ ইবি-৩ বিভাগের মোট ভারতীয় আবেদনের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ২৭৩টি।

বর্তমানে যে আইন আছে তা যদি না পাল্টানো না হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে ইবি-২ বিভাগের আবেদনকারীদের। তাদের আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকবে ১৫১ বছর। ওই বিভাগের আবেদনকারীরা সবাই উচ্চ ডিগ্রিধারী। এমন আবেদনকারীর সংখ্যা ২ লাখের বেশি। তাদের পরিবারের সদস্যদের আবেদনের সংখ্যাও একই পরিমাণ। ইবি-২ বিভাগে থাকা মোট ভারতীয় আবেদনকারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬৮ জন।

মূলত আবেদন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে দেশভিত্তিক যে কোটা আছে তার কারণেই উচ্চ ডিগ্রিধারী ভারতীয়দের এমন দীর্ঘ সময় অপেক্ষার ফাঁদে পড়তে হতে পারে। উচ্চ ডিগ্রিধারীদের জন্য দেশ প্রতি ৭ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া এটাও নির্ধারিত যে প্রতিটি বিভাগ থেকে অন্তত ৪ হাজার ৪০টি করে আবেদন মঞ্জুর করা হবে। তবে দেশ প্রতি ৭ শতাংশ কোটার বিষয়টি তখন কার্যকর হয় যখন ওই বিভাগের জন্য বরাদ্দ করা গ্রিন কার্ড শেষ হয়ে যায়। যদি তা না হয়, তাহলে ৭ শতাংশের বেশি আবেদন মঞ্জুর হতে পারে। যে কারণে ২০১৭ সালে বরাদ্দ করা মোট গ্রিন কার্ডের ১৮ শতাংশই ভারতীয় ইবি-৩ বিভাগের আবেদনকারীরা পেয়েছেন। কিন্তু এই সুবিধা উচ্চ ডিগ্রিধারীদের জন্য প্রযোজ্য ইবি-২ বিভাগের ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না। ফলে ওই ভারতীয় আবেদনকারীদের গ্রিন কার্ড পেতে দেড় শতাব্দী পার হয়ে যেত পারে।

গত বছরে মঞ্জুর করা গ্রিন কার্ড আবেদনের হিসেব থেকে দেখা গেছে মাত্র ২ হাজার ৮৭৯ জন উচ্চ ডিগ্রিধারী ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন। সেখানে দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য প্রযোজ্য ইবি-১ বিভাগে অনুমোদন পেয়েছেন ১৩ হাজার ০৮২ জন। অন্যদিকে শুধু স্নাতক সম্পন্ন করা ভারতীয় আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য ইবি-৩ বিভাগে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৬৪১ জনকে।