ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মেলানিয়া

মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। মেক্সিকোর অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিচালিত কঠোর অভিযানে বিপুল পরিমাণ পূর্ণবয়স্ক নারী-পুরুষ আটক হওয়ায় ১৯৯৫ জন শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রবিবার (১৭ জুন) ফার্স্টলেডির মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশাম মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে জানিয়েছেন, অভিবাসী শিশুদের তাদের মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন করাকে ঘৃণার চোখে দেখছেন মেলানিয়া। বারাক ওবামার ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের অধীনে এ সংক্রান্ত আইন প্রণীত হলেও মেলানিয়া মনে করছেন, কখনও কখনও হৃদয় দিয়েও শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়। অভিবাসন নীতিতে সংস্কার আনতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন তিনি। 

 মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প

মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের রুখতে সম্প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ নিয়ে সমালোচনার জবাবে শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে আসছেন, তিনি নতুন কোনও অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেননি। বিগত ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের নেওয়া নীতি মেনেই মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। অবশ্য অবৈধ অভিবাসীদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নকরণের ঘটনা পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলোতেও দেখা গেছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সে সংখ্যাটা অনেক কম ছিল। অতীতে দেখা গেছে, যেসব লোক অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতো এবং অপরাধের কোনও রেকর্ড ছিল না, তাদের আইনের আওতায় অপরাধী সাব্যস্ত না করে শুধুই অস্থায়ীভাবে আটক করা হতো কিংবা বিতাড়িত করার সুপারিশ করা হতো। মা ও শিশুরা সাধারণত একসঙ্গেই থাকতো। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সব ধরনের অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে আইনগত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করার প্রথম ৬ সপ্তাহেই প্রায় ২ হাজার শিশু পরিবার-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতীতে এমন নজির দেখা যায়নি।

মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতর-হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলরেছ, ১৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে সময়ের মধ্যে আটক হওয়া ১৯৪০ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে থাকা ১৯৯৫ জন শিশু পরিবার-বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে কার বয়স কতো, মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা জানানো হয়নি। ওই শিশুরা হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় সরকারের ডিটেনশন ফ্যাসালিটিজ ও ফস্টার কেয়ারে রাখা হয়েছে তাদের। এভাবে শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার নীতির বিরোধিতা করেছেন মার্কিন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। মেলানিয়ার মুখপাত্র সিএনএন-কে জানান, ‘পরিবারের কাছ থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার দৃশ্যকে মেলানিয়া ঘৃণার চোখে দেখেন। তিনি আশা করেন, কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই পক্ষ শেষ পর্যন্ত অভিবাসন আইন সংস্কারের প্রশ্নে একমত হতে পারবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প শিশুদের এই বিচ্ছিন্নকরণ প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী করছেন ‘ডেমোক্র্যাটদের প্রণীত’ আইনকে। তবে অতীতের অভিবাসন নীতির সঙ্গে সাম্প্রতিক পদক্ষেপের পার্থক্য টানতে গিয়ে সমালোচকরা উল্লেখ করেছেন সে দেশের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের নেওয়া সিদ্ধান্তকে। ডিপার্টমেন্টের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স গত মাসে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন, অপরাধী-নিরপরাধ নির্বিশেষে প্রথমবারের মতো কেউ অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করলেও তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে আইনের আওতায় নেওয়া হবে। শিশুদের যেহেতু অপরাধী বিবেচনা করার সুযোগ নাই, সে কারণে তারা পূর্ণবয়স্ক অভিভাবকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

জেফ সেশন্স এ মাসে বাইবেলকে উদ্ধৃত করে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতির পক্ষে যুক্তি হাজির করেন। বাইবেল থেকে সেইন্ট পলকে উদ্ধৃত করে সেশন্স বলেন, তিনি জনসাধারণকে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছিলেন। কেননা, স্রষ্টা তার নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারকে দিয়েছেন। অভিবাসন প্রশ্নকে এর সঙ্গে যুক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের নীতি সাময়িকভাবে শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে, তবে এই সিদ্ধান্ত অপ্রয়োজনীয় ও অন্যায্য নয়’। তবে মেলানিয়ার অবস্থান ভিন্ন। তিনি মনে করেন, যাবতীয় আইন অনুসরণের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি দেশ হওয়া উচিত, যার শাসনকার্য পরিচালিত হবে হৃদয়গত বোধ দিয়ে।

উল্লেখ্য, ফার্স্টলেডি হিসেবে হোয়াইট হাউসে আসার পর থেকেই শিশুদের সুরক্ষার প্রশ্নটিকে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছেন তিনি। সাইবার অপরাধ ও আফিমের মহামারি থেকে শিশুদের সুরক্ষাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা গেছে তাকে। গত মে মাসে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে মেলানিয়া বলেন, ভবিষ্যতেও তিনি শিশুদের নিয়ে কাজ করবেন। শিশুদের নির্দিষ্ট একটি সমস্যা সমাধানে আটকে না থেকে তাদের সুরক্ষামূলক বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করার প্রত্যয় জানান তিনি।