ভুয়া ফলোয়ারধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ইউনিলিভার

ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউলিভার জানিয়েছে, যেসব ডিজিটাল মিডিয়া ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ ভুয়া ফলোয়ার কেনে তাদের সঙ্গে আর কাজ করবে না তারা। প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যাশা, এতে করে বিজ্ঞাপনের জগতে আরও বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ভুয়া ফলোয়ারধারীদের জন্য বিশ্বাস নষ্ট হলে খুব দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন ইউনিলিভারের বিপণন প্রধান। তার ভাষায়, ‘বিশ্বাস পায়ে হেঁটে আসে; কিন্তু ঘোড়ায় চড়ে চলে যায়।’ যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিজ্ঞাপনের পেছনে অর্থ ব্যয়ের দিক দিয়ে ইউলিভার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান।

Unilever-sign-Mexico-990x557_tcm1252-420843

বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যত বেশি ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেওয়ার দিকে ঝুঁকছে তত বেশি বিশেষ এক ধরনের বিজ্ঞাপন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা ইউটিউবের মতো ভিডিও দেখার পরিষেবাগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফলোয়ার্স আছে এমন ব্যবহারকারীদের অর্থের বিনিময়ে পণ্যের প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও ইউটিউবের এমন ব্যবহারকারীদের অনলাইন বিজ্ঞাপনের জগতে ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ নামে ডাকা হয়। এরা পণ্যের প্রচারণায় বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করেন, ভিডিওতে পণ্যের নানা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। কেউ কেউ ব্যবহারের নিয়মাবলী ব্যাখ্যা করেন। আবার কেউ হয়তো বেশ কিছুদিন ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট পণ্যের মূল্যায়ন তুলে ধরেন। যার ফলোয়ার্স যত বেশি সাধারণভাবে তার লেখা, ছবি ও ভিডিও তত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ‘ফলোয়ার’ বা অনুসারীর সংখ্যা কত সেটার ওপর ভিত্তি করে পণ্যের প্রচারের জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের দ্বারস্থ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে। এতে ইনফ্লুয়েন্সাররাও যেভাবে সম্ভব নিজেদের ফলোয়ার সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হন। কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে অস্তিত্বহীন ব্যক্তির নামে খোলা অ্যাকাউন্ট বা বাস্তব কারও ছবি ও তথ্য চুরি করে বানানো প্রোফাইল অর্থাৎ ফেক আইডিকেও ফলোয়ার হিসেবে পাওয়ার জন্য অর্থ খরচ করেন। এতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের যাছে সত্যি তার লেখা বা ভিডিও না পৌঁছালেও সংখ্যাগত দিক থেকে তিনি বিজ্ঞাপনদাতাদের মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হন। ইউনিলিভার এখন এমন ভুয়া ফলোয়ারধারী ‘ইনফ্লুয়েন্সারদের’ কাছ থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ভুয়া ফলোয়ার কেনার যে প্রবণতা তা বিশ্বাস নষ্ট করছে এবং দ্রুত বর্ধনশীল ‘ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং’ শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পণ্যের প্রচারণার জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের তৎপরতার আর্থিক মূল্য বছরে এক হাজার কোটি ডলার।

ইউনিলিভারের বিপণন প্রধান কেইথ উইড সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ডাভ সাবান ও হেলম্যান মেয়োনিজের জন্য কোনও ভুয়া ফলোয়ার কখনও কেনা হবে না। আর যেসব ইনফ্লুয়েন্সার ভুয়া ফলোয়ার কেনে তাদের সঙ্গে পণ্যের প্রচারণার জন্য আর কোনও চুক্তি করবে না ইউনিলিভার। এর পাশাপাশি যেসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তাদের সঙ্গেই বেশি কাজ করবে তার প্রতিষ্ঠান। রয়টার্সকে উইড বলেছেন, ‘বিশ্বাস পায়ে হেঁটে আসে; কিন্তু যাওয়ার সময় ঘোড়ায় করে চলে যায়। এভাবে চলতে থাকলে আমরা খুব দ্রুতই ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব চলে যেতে দেখব। অবশ্যই ভালো ইনফ্লুয়েন্সার আছে। কিন্তু কয়েকজন খারাপ লোকের কারণে বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে। একবার বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেলে তা সবাইকেই ডোবাবে।’