ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে ‘সরকার অনুমোদিত শিশু নির্যাতন’ আখ্যা

যুক্তরাষ্ট্রে অনথিভুক্ত অভিবাসী শিশুদেরকে তাদের মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন করার কঠোর নীতির সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশন। ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত এ ধরনের পদক্ষেপকে ‘সরকার অনুমোদিত শিশু নির্যাতন’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন জেইদ রাদ আল হুসেইন। চলতি মাসে আগেও একবার মানবাধিকার কমিশন থেকে এ নীতির নিন্দা জানানো হয়েছিল।
রা`দ আল হোসেন (বায়ে)

বিগত ৬ সপ্তাহে মেক্সিকোর অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিচালিত ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র বলি হয়েছে প্রায় ২ হাজার শিশু (১৯৯৫ জন)। অতীতে মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকায় প্রবেশকারীদের অপরাধের রেকর্ড না থাকলে তাদের কেবল অস্থায়ীভাবে আটক রাখা হতো। এ কারণে শিশুরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গেই থাকতে পারত। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া জিরো টলারেন্স নীতিতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা সব মানুষকেই আইনের আওতায় নেওয়া হচ্ছে। শিশুরা আইনের চোখে অপরাধী না হওয়ায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তাদের জায়গা হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন আটককেন্দ্রে। 

সোমবার (১৮ জুন) জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন অভিবাসন প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া এই ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুরা এমন অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হতে পারে, যা তাদেরকে জীবনভর বয়ে বেড়াতে হবে। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিকস-এর প্রেসিডেন্টের একটি পর্যবেক্ষণকে উদ্ধৃত করে রাদ আল হুসেইন বলেন, “শিশুদেরকে তাদের মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন করে আটকে রাখাটা ‘সরকার-অনুমোদিত শিশু নির্যাতন’। শিশুদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন চালিয়ে মা-বাবাকে ভয় দেখানো ‘বিবেক বর্জিত’ পদক্ষেপ।”
ট্রাম্পের জিরো টলারেন্স নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার বিশ্ব

চলতি মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে শিশুদেরকে তাদের অভিভাবকের কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন করাকে শিশু অধিকার আর আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। রাদ আল হোসেনের মন্তব্য তারই ধারাবাহিকতা।

অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্পের জিরো টলারেন্স নীতির বিরোধিতা করে সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশসহ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন নেতা নিন্দা জানিয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা মন্তব্য প্রতিবেদনে সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করে বলেছেছেন, ‘আমি সীমান্ত সংলগ্ন একটি রাজ্যে বসবাস করি। আমাদের আন্তর্জাতিক সীমান্তগুলোর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করি আমি। কিন্তু এ জিরো টলারেন্স নীতি নিষ্ঠুর। এটা অনৈতিক। এতে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে।’ লরা বুশের মন্তব্য প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে বর্তমান ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের মুখপাত্রও জানান, তিনি (মেলানিয়া) পরিবারের কাছ থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করাকে ঘৃণা করেন। তিনি আশা করেন, কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই পক্ষ শেষ পর্যন্ত অভিবাসন আইন সংস্কারের প্রশ্নে একমত হতে পারবে। মেলানিয়া মনে করেন যাবতীয় আইন অনুসরণের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি দেশ হওয়া উচিত, যার শাসনকার্য পরিচালিত হবে হৃদয়গত বোধ দিয়ে।