কাশ্মিরে বিজেপির রাজনৈতিক বাসনাই বাস্তবায়িত হচ্ছে?

জম্মু-কাশ্মিরে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-পিডিপি ও ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যকার জোট ভেঙে যাওয়ার পর রাজ্যতে পরবর্তীতে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিজেপি জোট সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার ধারাবাহিকতায় মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন পিডিপি নেতা মেহবুবা মুফতি।  ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসন পাওয়ার দিক থেকে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেস মেহবুবার দলের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। এতে ওই রাজ্যে গভর্নরের শাসন জারির সম্ভাবনা এখন স্পষ্ট। বিজেপি এরইমধ্যে গভর্নরের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের আগ্রহ স্পষ্ট করেছে। সেই বাসনার বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।kashmir

জম্মু-কাশ্মির বিধানসভায় মোট ৮৭টি আসন। ২০১৪-র মে মাসে উপত্যকায় যে নির্বাচন হয়, সেখানে পিডিপি পেয়েছিল ২৮টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ২৫টি। এ ছাড়া ওমর আবদুল্লাহর দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ১৫টি, কংগ্রেস ১২টি এবং অন্যান্যরা ৭টি আসন পেয়েছিল। বিজেপি এবং পিডিপি যৌথভাবে প্রয়োজনীয় ৪৪ আসন ছাড়িয়ে ৫৩টি আসন নিশ্চিত করে জোট গঠন করেছিল।

বিধানসভার বর্তমান সদস্য সংখ্যার হিসাবে পিডিপি, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেস যদি হাত মেলায় তবেই কেবল স্থিতিশীল সরকার গঠন করা সম্ভব। কিন্তু পিডিপি সরকারের অংশ হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কংগ্রেস। মঙ্গলবার কংগ্রেস নেতা গোলাম নবী আজাদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পিডিপির সঙ্গে জোট গঠনের প্রশ্নই ওঠে না।’ তার মতে, স্থানীয় দলের সঙ্গে জোট গঠন করে ‘হিমালয় সমান ভুল করেছে’ বিজেপি। স্থানীয় দলগুলোকে স্থানীয় অপরাপর দলের সঙ্গে জোট করতে দেওয়া উচিত।

পিডিপি, ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং কয়েকজন স্বতন্ত্র বিধায়ক একত্রিত হলে সরকার গঠন করাও যেতে পারে। কিন্তু ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর নেতা ওমর আব্দুল্লাহ সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গভর্নরের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। তিনি গভর্নরকে বলেছেন, ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স ২০১৪ সালে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি; ২০১৮ সালেও নয়। আমাদের কাছে কেউ সরকার গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আসেনি আর আমরাও কারও কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছি না।’ তিনি মনে করেন, এরকম অবস্থায় গভর্নরের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়ে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মিরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গভর্নর ভোহরার ওপর আমাদের আস্থা রাখা উচিত।’

তৃতীয়ত, ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস ও অন্যরা যদি আস্থা ভোটে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে তবে পিডিপি সংখ্যালঘু সরকার পরিচালনা করতে পারবে। ভারতীয় সংবিধান মোতাবেক, জম্মু কাশ্মিরের গভর্নর জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনার অনুপস্থিতিতে  সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পাওয়া দল হিসেবে মেহবুবার পিডিপিকে ‘সংখ্যালঘু সরকার’ গঠনের আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন। এ ধরনের সরকার তখনই স্থায়ী হয় যখন কেউ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা না আনে। তবে মেহবুবার অনাস্থার শিকার না হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই যেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া বিজেপির সঙ্গে মতভেদের কারণেই তাদের জোট ভেঙে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে জম্মু-কাশ্মিরের গন্তব্য একটাই। সংবিধান মোতাবেক বিধানসভা ভেঙে যাওয়া এবং রাজ্যে গভর্নরের শাসন জারি হওয়া। মেহবুবার দলের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজেপি নেতা রাম মাধব দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মিরের জোটের শরিক হয়ে থাকাটা বিজেপির জন্য অস্থিতিশীলতা তৈরি করছিল। সেখানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা সামলানোর জন্য গভর্নরের হাতে ক্ষমতা যাওয়া দরকার।’ সংবাদ সম্মেলনে  রাম মাধব বলেন, জম্মু ও কাশ্মিরের ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার কথা মাথায় রেখে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের অভিমত, ক্ষমতার রাজ্যপালের হাতে তুলে দেওয়াই শ্রেয়।’ জম্মু-কাশ্মিরে বিজেপির সেই রাজনৈতিক বাসনাই বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।