দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে জাপান

দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরে হেলিকপ্টারবাহী বড় যুদ্ধজাহাজ পাঠাবে জাপান। বার্ষিক ভ্রমণের মাধ্যমে কৌশলগত সামুদ্রিক অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি বাড়ানোর অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি। আগামী সেপ্টেম্বরে যুদ্ধজাহাজটি তার দুই মাসের ভ্রমণ শুরু করবে। জাপানের দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

download

দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরে চীনের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই এলাকাটিতে উপস্থিতি বাড়াচ্ছে জাপান। ওই অঞ্চলেই জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের অবস্থান। গত বছরও দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরে একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল তারা।

জাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমর্থনে জাপানে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এটা করা হচ্ছে’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি আরও জানায়, ২৪৮ মিটার দৈর্ঘে্যর ‘কাগা’ নামের যুদ্ধজাহাজটি থেকে বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার একযোগে উড্ডয়ন করতে পারে। জাহাজটি ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে থামবে। ভারত ও শ্রীলঙ্কার বন্দরেও যাত্রাবিরতি করবে জাহাজটি।

দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ এলাকা নিজেদের দাবি করে থাকে চীন। তারা সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করছে। তবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই এটা করা হচ্ছে বলে দাবি করে আসছে চীন। এছাড়া ভারত মহাসাগরেও নৌ-বাহিনীর অভিযান জোরদার করেছে চীন। নৌ-চলাচল অবাধ রাখা নিশ্চিত করার কথা বলে দক্ষিণ চীন সাগরে নিয়মিত বিমান ও নৌ-টহল চালিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র হাওয়াইয়ে তাদের ‘প্যাসিফিক কমান্ড হেডকোয়ার্টার্সে’র নাম পরিবর্তন করে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড’ রেখেছে। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের ইঙ্গিত হিসেবেই তা করা হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ নৌ-চলাচল কার্যক্রমে জাপান অংশ নেয়নি। কারণ তা পশ্চিম চীন সাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে চীনকে উস্কানি দিতে পারে। সেখানে জাপানের ‘সেনকাকু’ ও চীনের ‘দিয়াওউ’  দ্বীপের মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে।

izumo-japanese-helicopter-carrier

জাপানি কর্মকর্তারা বলেন, সামরিক জাহাজ কাগা’র সঙ্গে একটি প্রহরী জাহাজও থাকবে। এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের যুদ্ধ জাহাজ মিলিয়ে সামরিক মহড়ায়ও অংশ নিতে পারে জাহাজটি। তবে জাপানের সমুদ্র প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, তিনি ভবিষ্যত কার্যক্রম নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না।

বাণিজ্য নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও তাইওয়ানের স্বায়ত্তশাসনের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের মধ্যেই গত মাসে চীন সফর করেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিম ম্যাটিস। ওই সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের এক ইঞ্চিও ছাড়া দিবো না। একইসঙ্গে অন্য কারও ছোট অংশও আমরা দখল করবো না।’ তিনি বলেন, প্রশান্ত মহাসাগর এত বড় যে ‍যুক্তরাষ্ট্র বা চীনসহ সবাই এর সুবিধা ভোগ করতে পারে। এই অবস্থাতেই চীন সাগরে সামরিক জাহাজ পাঠাচ্ছে জাপান।

মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনস, ব্রুনেইও দক্ষিণ চীন সাগরের অংশের মালিকানা দাবি করে থাকে। সাগরটিতে প্রচুর মাছ থাকার পাশাপাশি তেল ও গ্যাসের খনি রয়েছে। তাইওয়ানও সাগরটির কিছু অংশের মালিকানা দাবি করে থাকে। তবে জাপান সেখানকার কোনও অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে না।

2018-07-04T043838Z_1_LYNXMPEE6307A-OUSTP_RTROPTP_3_NEWS-US-JAPAN-DEFENCE-SOUTHCHINASEA-EXCLUSIVE

মালদ্বীপে চীনে ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির কারণে ভারত মহাসাগরে চীন ও ভারতের মধ্যকার উত্তেজনা হঠাৎ বেড়ে গেছে। দেশটি দীর্ঘকাল ধরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সম্প্রতি চীনে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে যোগ দিয়েছে। এর ফলে মালদ্বীপে বাণিজ্য ও যোগাযোগ উন্নত করতে কাজ করছে চীন। এর ফলে দেশটিতে চীনের অবস্থান জোরালো হচ্ছে। উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলটিতে আরও বিস্তৃত ভূমিকা রাখার জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সরকার যুদ্ধপরবর্তী সংবিধান সংশোধন করেছেন। ওই সংবিধান অনুযায়ী বিদেশি অভিযানে যুদ্ধজাহাজ, বিমান বা সেনা পাঠানোর ক্ষেত্রে জাপানের সীমাবদ্ধতা ছিল।

কাগা যুদ্ধ জাহাজটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিজ ইম্পেরিয়ান নেভির ব্যবহার করা জাহাজের মতোই বড়। সাংবিধানিক বিধি-নিষেধের মধ্যে রাখার জন্য এটাকে প্রতিরক্ষামূলকভাবে তৈরি করা হয়েছে। জাপানের পশ্চিমাঞ্চলের কুরে ঘাঁটিতে গত বছরের মার্চ মাসে জাহাজটির উদ্বোধন করা হয়। প্রথমবার জাহাজটি সাবমেরিনবিরোধী অভিযানে অংশ নেয়। এবারের দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগর ভ্রমণের সময় জাহাজটির সঙ্গে সহকারী জাহাজ হিসেবে ‘ওসুমি’ সঙ্গে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।