ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। কারাম আবু সালেম নামের এই কমার্শিয়াল বর্ডার ক্রসিং দিয়ে গাজার বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হতো। ৯ জুলাই ২০১৮ সোমবার এটি বন্ধের উদ্যোগ নেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। অতি প্রয়োজনীয় এ সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপকে গাজাবাসীর বিরুদ্ধে ‘সামষ্টিক শাস্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। আর এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এমন পদক্ষেপকে ‘গাজাবাসীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
সোমবার তেল আবিবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের অগ্নিসংযোগের বদলা নিতে গাজা উপত্যকার কারাম আবু সালেম কমার্শিয়াল বর্ডার ক্রসিং বন্ধ করে দেবে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর সীমান্ত ক্রসিংটি বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কারাম আবু সালেম কমার্শিয়াল বর্ডার ক্রসিংটি ইসরায়েল কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আজ মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আল জাজিরা’কে জানিয়েছেন, এরপর থেকে শুধু রান্নার গ্যাস এবং গম ও ময়দার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য ক্রসিংটি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে গাজা উপত্যকায় পোশাক সামগ্রী ও নির্মাণ সামগ্রী প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না।
এ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে গাজা উপত্যকার ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার জন্য বৈদেশিক সহায়তা ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়।
এদিকে ফিলিস্তিনের একটি বেদুইন গ্রাম নিশ্চিহ্ণের উদ্যোগ নিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় বাসিন্দা ও অধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, পশ্চিম তীরের কৌশগলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ খান আল-আহমার গ্রামটি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে। সেখানকার ১৭৩ জন বাসিন্দার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি বাইরে থেকে গ্রামটিতে যাওয়ার প্রবেশ পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বুলডোজারসহ ভারী যন্ত্রপাতির সমাবেশ ঘটিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বন্ধ করে দেওয়া রাস্তাটি ধংস করে ফেলা হবে।
খান আল আহমার গ্রামটি পূর্ব জেরুজালেমে কয়েকটি ইসরায়েলি স্থাপনার কাছে অবস্থিত। ওই গ্রামের মধ্য দিয়ে মৃত সাগর পর্যন্ত একটি রাস্তা চলে গেছে। অধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, এখানে ইসরায়েলি স্থাপনা নির্মাণ পশ্চিম তীরকে কার্যত দুই ভাগে ভাগ করে ফেলবে।
ইসরায়েলি মানবাধিকার গ্রুপ বি’টেসেলেম এর মুখপাত্র অমিত গিলাটজ ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তারা ধংস করে দেওয়ার মতো অবকাঠামোগত কাজ আর বাসিন্দাদের জোর করে স্থানান্তর করার কাজ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
ইসরায়েল নিয়মিত ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংস করে দেয়। তাদের অজুহাত, সেগুলো অনুমোদনবিহীন। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করতে দিতে চায় না। ওইসব এলাকায় তারা অবৈধ ইসরায়েলি বসতির মতো অবকাঠামো নির্মাণ করে থাকে। সূত্র: আল জাজিরা, মিডল ইস্ট আই।