থাইল্যান্ডের থিয়াম লাং গুহা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে কথা বললো সেই কিশোররা। বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ডুবুরিরা ৯ দিন পর যখন তাদের খুঁজে পান সেই মুহূর্তকে অলৌকিক বলে মনে হচ্ছিলো তাদের। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
উদ্ধার করার সঙ্গে সঙ্গে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ওই শিশু ফুটবলারদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সংক্রমণ এড়াতে তাদের রাখা হয় সুরক্ষিত কক্ষে। তবে বুধবার ৪৫ মিনিটের জন্য সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয় তারা। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন। এ অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় ‘থাইল্যান্ড মুভস ফরোয়ার্ড’।
সংবাদ সম্মেলনে আদুল স্যাম নামে ১৪ বছরের এক কিশোর জানায়, শুধুমাত্র সে-ই ইংরেজি বলতে পারতো। সে বলে, যখন প্রথম ব্রিটিশ ডুবুরিরা তাদের কাছে পৌঁছালো, ততদিনে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। তাদের দেখে সেই প্রথম ‘হ্যালো’ বলে ওঠে।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের ফুটবল জার্সি পরে উপস্থিত হয় ওয়াইল্ড বোয়ার্স ফুটবল ক্লাবের সেই থাই কিশোররা। তাদের সঙ্গে উদ্ধারকারী নেভি সিল দলের সদস্যরাও ছিলেন। একজন কিশোর জানায়, গুহায় শুধু পানি খেয়ে বেঁচে ছিলেন তারা। সে বলে, ‘পানি পরিষ্কার ছিল, কিন্তু কোনও খাবার ছিল না।’
কয়েকজন কিশোর বলে, তারা নিয়ম শিখেছে, অধ্যবসায়ী হয়েছে। এক কিশোর সারা জীবন আরও সাবধান থাকার ও জীবন পুরোপুরি উপভোগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আরেক কিশোর বলে, ‘এই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও ধৈর্যশীল ও মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে শিখিয়েছে।’
চিং রাইয়ের প্রাদেশিক গভর্নর প্রাচন প্রাতসুকান বলেন, এটাই তাদের দেওয়া একমাত্র সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান। এরপর আর কখনও তারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবে না।
আগে থেকেই সাংবাদিকদের জমা দেওয়া প্রশ্নের উত্তর দেন কিশোর ও তাদের কোচ। সেটা খতিয়ে দেখেন একজন শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। দেশটির মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা তাওয়াতচাই থাইকেও বলেন, ‘আমরা জানি না শিশুরা তাদের হৃদয়ে কতটা ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের অতি আগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিশুদের এখন একটু একা থাকা প্রয়োজন।
শিশুদের কিছু দিনের জন্য বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছে রাখা হতে পারে। থাইল্যান্ডে ঐতিহ্যগতভাবেই এমনটা হয়ে আসছে। যারা দুর্ভাগ্যের শিকার হন, কিছুদিনের জন্য তারা ভিক্ষুদের কাছে আশ্রয় নেন।
এর আগে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন প্রায় ৩ সপ্তাহ অন্ধকারে কাটিয়ে এলেও উদ্ধার হওয়া কিশোররা বড় ধরনের কোনও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে নেই। তারা জানান, গুহায় খাবারের অভাবে তাদের খানিকটা স্বাস্থ্যহানি হলেও কিশোররা তেমন কোনও সংকটে ছিল না।
গুহায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করার আগের নয়দিনে শিশুরা কোনও খাবার খায়নি, তারা গুহার ঘোলাটে পানি পান করেছে। তাতেই তাদের জীবন বেঁচে গেছে। মঙ্গলবার (১০ জুলাই) কর্তৃপক্ষ জানায়, শিশুদের কেউ কেউ চকলেট মাখানো পাউরুটি খেতে চেয়েছে। তবে বেশিরভাগ সময় তাদের প্রোটিন ও নিউট্রিয়েন্টযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে।
গুহার ভেতরে শিশুদের সহায়তা দেওয়ার জন্য থাই নেভি সিলের কয়েকজন সদস্য ও একজন চিকিৎসক তাদের সঙ্গে ছিলেন। চূড়ান্ত অভিযান শেষ হওয়ার পর তারাও গুহা থেকে বের হয়ে আসেন। তাদেরও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।