অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে মোদি সরকারের বিশাল জয়

ভারতের লোকসভায় নরেন্দ মোদির সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়নি। শুক্রবার প্রায় ১২ ঘণ্টার বিতর্ক শেষে ভোটাভুটিতে এই অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে পড়ে ৩২৫ ভোট। আর প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ১২৬ ভোট। এই ভোটাভুটিতে সরকার রাজনৈতিক সীমানা ছাড়িয়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন আদায় করতে পেরেছে।

Modi-trust-vote

শুক্রবারের এই ভোটাভুটিতে কেউই ভোটদানে বিরত ছিল না তবে কয়েকটি দল ভোট বর্জন করায় সরকারের পক্ষের ভোট আরও কিছু কমেছে। প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে চলা সংসদের অধিবেশনের পর লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন কণ্ঠভোটের আহ্বান জানান। সেই ভোটাভুটিতে জয় হয় এনডিএ সরকারের। সরকারের এই জয় প্রত্যাশিতই ছিল। তবে বিরোধীরা কতটা জোটবদ্ধ ছিল তা বুঝে নেওয়ার পরীক্ষাই যেন ছিল এই অনাস্থা প্রস্তাব। বিরোধী শক্তি যে এখনও ততটা মজবুত নয়, তা স্পষ্ট হল। অন্য দিকে, অধিবেশনের এনডিএ সরকারের পাশে শিবসেনা এবং বিজেডি সাংসদের না পেলেও বিপুল ভোটে জয় হল নরেন্দ্র মোদী সরকারের।

বিজু জনতা দল-বিজেডি ও শিব সেনারা ভোট না দেওয়ায় লোকসভার ভোট কমে দাঁড়ায় ৪৯৬ এ। তবে ভোটাভুটি শেষে গণনা করলে দেখা যায়, আরও ৪৫ জন এমপি ভোট দেননি। টিআরএস এই অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর বিতর্কে অংশ নিলেও তাদের ১১ জন এমপি ভোট দেননি। তবে কোন কোন এমপি ভোট দেননি তা এখনও জানা যায়নি।

noname

ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধীর কথার জবাব দেন। শুক্রবার সকালে লোকসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় রাহুল মোদিকে জড়িয়ে ধরে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছিলেন। তার আগে রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে অনেক কথা বলেন। জবাবে মোদি বলেন, ‌‘সকালে ভোট শেষ হয়নি, বিতর্কই শেষ হয়নি কিন্তু একজন সদস্য আমার কাছে দৌড়ে এসে বললেন, ওঠো, ওঠো, ওঠো। ক্ষমতায় আসার এত জলদি কেন? আমি বলছি, এসব মানুষ আমাদের নির্বাচিত করেছে। আমরা এভাবেই এখানে এসেছি’।

মোদি বলেন, ‘আমরা এখানে কারণ আমাদের জন্য ভারতের ১২৫ কোটি মানুষের দোয়া আছে। আমরা এখানে নিজস্ব স্বার্থের জন্য আসিনি’। মোদি আরও বলেন, এই অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতিবাচকতা ফুটে উঠেছে। তিনি উল্টো কংগ্রেসকে বলেন, এটা সরকারের নয়, সবচেয়ে পুরোনো দলটির জন্যই পরীক্ষা। মোদি আরও বলেন, ‘কংগ্রেসের নির্বাচন কমিশনের ওপর বিশ্বাস নেই, বিচারবিভাগের ওপর বিশ্বাস নেই, আরবিআই বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ওপরও বিশ্বাস নেই। তাদের কোনও কিছু ওপরই ভরসা নেই’।

বক্তব্যের শুরুতে লোকসভায় তার সরকারের ওপর আনা অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য এমপিদের প্রতি আহ্বান জানান মোদি। তিনি বলেন ‘এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি আপনাদের সবার প্রতি আহ্বান জানাই। অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় এত তাড়াহুড়োর কী আছে?’

শুক্রবার সকাল ১১টায় তেলুগু দেশম, কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলির আনা অনাস্থা প্রস্তাবে বিতর্ক শুরু হয়। বিতর্ক শুরুর আগেই নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডি-র সাংসদেরা সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। এর আগেই এনডিএ-র আর এক শরিক শিবসেনাও গোটা বিতর্ক থেকে সরে দাঁড়ায়।

গোটা দিন বিতর্কের পর রাত ৯টা নাগাদ সংসদে বলতে উঠেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের ভাষণে বলতে উঠে এনডিএ সরকারের উন্নয়নের রিপোর্ট কার্ড তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি,  রাহুল গান্ধীকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করেন তিনি। বিরোধীরা যে কেবলমাত্র নেতিবাচক রাজনীতি করছে তা অভিযোগ করেন মোদী। একই সঙ্গে তার কটাক্ষ,  এটি আসলে সরকারের নয়, বরং বিরোধী জোটের পরীক্ষা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের উদ্দেশে মোদীর মন্তব্য, ‘‌২০২৪-এ ফের অনাস্থা প্রস্তাব আনুন। তার জন্য শুভকামনা রইল’।

রাহুল তার ভাষণে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণের নিশানা বানিয়েছিলেন। রাফাল চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘ফরাসি প্রেসি়ডেন্ট তাকে জানিয়েছেন, ওই চুক্তি ভারত সরকার ইচ্ছা করলেই প্রকাশ করতে পারে’। যদিও পরে ফরাসি সরকারের তরফে জানানো হয়, ওই চুক্তির তথ্য কোনও দেশই প্রকাশ্যে আনতে পারবে না। দুর্নীতি প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শুধু চৌকিদার নন, ভাগীদার’। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি দেশের চৌকিদার। কিন্তু তিনি আসলে দুর্নীতির ভাগীদার। কারণ, বিভিন্ন দুর্নীতির অংশীদার প্রধানমন্ত্রীও’। রাহুলের সেই মন্তব্যের উত্তরে মোদী বলেন, ‘আমি চৌকিদার-ভাগীদার বটে, তবে উন্নয়নের। আপনাদের মতো সওদাগর নই’। পাশাপাশি, রাফাল চুক্তি নিয়ে রাহুলের মন্তব্য শিশুসুলভ বলে দাবি করেন মোদী।