তীব্র গরমে জার্মানি ঐতিহ্যবাহী ও মনোরোম রাইন নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেট্রো প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, রাইনের একটি অংশ পুরোটা শুকিয়ে গেছে। গরমে মারা যাচ্ছে অনেক মাছ।
রাইনের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩২০ কিমি (৮২০ মাইল)। প্রতি সেকেন্ডে গড়ে এর মধ্য দিয়ে দুই হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হয়। কিন্ত এখন এর পানি অস্বাভাবিক রকম কমে গেছে। মেট্রো ইউকের মতে, অনেক স্থানকে এখন পাথুরে মরুভূমির মতো লাগছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে সুইস পানির তাপমাত্রা বেশি হয়ে যাওয়াত অনেক মাছ মারা গিয়েছিলো। রাইনের পানির উষ্ণতা বেড়ে গিয়েছিলো চার ডিগ্রি পর্যন্ত।
স্কাফহসেন ক্যান্টনে হান্টিং এন্ড ফিশারি বিভাগের কমী অ্যান্দ্রে ভোগেলি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে মৃত মাছ সংগ্রহ করছেন তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন ধরেই দেখছি রাইনে মরা মাছ ভেসে উঠছে। এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার কেজি মৃত মাছ সংগ্রহ করেছি আমরা।
সুইস ফিশারিস অ্যাসোসিয়েশনের স্যামুয়েল গ্রান্ডলার বলেন, স্বল্পপানিতে পরিস্থিতি আরও ভয়বহ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো সবকিছু করেছি।’
সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি ছাড়াও রাইন নদী লিচেস্টেন, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস দিয়েও অববাহিত হয়। শুধু রাইন নয়, ইউরোপজুড়েই তাপদাহ শুরু হয়েছে। ১৯৭৬ সালের পর থেকে সবচেয়ে তীব্র তাপদাহ দেখছে যুক্তরাজ্য। ম্যানচেস্টারের কাছে ওয়াহ রেজার্ভারও শুকিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে মেট্রো।
পণ্য পরিবহনের জন্য ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী রাইন৷ প্রতিদিন শত শত মাল বোঝাই কার্গো জাহাজ ইউরোপের বিভিন্ন রুটে চলাচল করে এ নদী দিয়ে৷ শহর ঘেঁষে বয়ে গেলেও রাইন নদীতে কোনো দূষণ নেই৷ তাই এ নদীর পানি সারা বছরই টলটলে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালের ৭ মার্চ মার্কিন সেনাকর্মকর্তা লে. কর্নেল এইচ টিয়াম্যানের নেতৃত্বে ইউএস নবম আর্মড ডিভিশন এই ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এর আগে মিত্রশক্তির অগ্রগতি ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে হিটলার বাহিনী এই ব্রিজকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য দুবার ব্যর্থ চেষ্টাও চালায়। প্রত্যেকটি চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় হিটলার এতটাই খেপে যান যে তিনি সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত বসিয়ে পাঁচ জার্মান অফিসারের মৃত্যুদণ্ডও দেন। ব্রিজ ধ্বংসে হিটলারের সব চেষ্টা ব্যর্থ হলেও ১৯৪৫ সালের ১৭ মার্চ অতিরিক্ত ওজনের চাপের কারণে এই ব্রিজটি আপনাতেই ধসে পড়ে। যুদ্ধ শেষে এই স্থানটি হয়ে ওঠে দর্শনীয় ও ইতিহাসখ্যাত। দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন ছুটে আসে রাইন নদীর তীরে এই অতি শান্ত এলাকাটিতে, শ্রদ্ধা জানায় নিহতদের।