বিতরণ না করে ১০ হাজার চিঠি ফেলে রেখেছিলেন তিনি

আপনি হয়তো চাকরির জন্য কোথাও পরীক্ষা দিয়ে মনোনীত হয়েছিলেন কিংবা আবেদন করেছিলেন ব্যাংকের এটিএম কার্ডের জন্য। কর্তৃপক্ষ সেটা অনুমোদনও করেছিল। চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছিল আপনাকে। হয়তো প্রিয়জনের কাছ থেকে একটি চিঠির জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। তিনিও চিঠিটি পাঠিয়েছেন। কিন্তু কখনও এসব চিঠি হাতে পাননি আপনি। হ্যাঁ, এমনটা সম্ভব, যদি যদি ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের ওধাঙ্গা গ্রামের অধিবাসী হন। প্রত্যাশিত চিঠিটি হয়তো ঠিকই এসেছিল কিন্তু সেটা আর আপনার হাতে এসে পৌঁছায়নি। আপনি যে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন সেটিও প্রাপকের হাতে পৌঁছায়নি। কারণ সেখানকার স্থানীয় ডাক বিভাগের একজন কর্মী এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অন্তত ১০ হাজার চিঠি বিতরণ না করে সেগুলো ফেলে রেখেছিলেন। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্তুপীকৃত চিঠিবিষয়টি সামনে আসে একদল শিশুর মাধ্যমে। ওই স্কুলপড়ুয়া শিশুরা ডাক বিভাগের পরিত্যাক্ত একটি ভবনে খেলা করছিল। পোস্ট অফিসের ওই শাখাটি নতুন একটি জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পর ভবনটি খালি পড়েছিল। তার উঠোনে খেলা করতে গিয়ে শিশুরা দেখতে পায় যে, ভবনের ভেতরে কয়েকটি বস্তা এবং সেসব বস্তা থেকে পুরনো চিঠি বেরিয়ে আসছে। এরপর তারা কৌতুহলী হয়ে উঠে। বস্তাগুলো খুলে ভেতরে খুঁজে পায় এটিএম কার্ড, ব্যাংকের পাস বই ইত্যাদি। তারা অভিভাবকদের গিয়ে চিঠিগুলোর কথা জানায়। তারপর অভিভাবকরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হাজির হয়।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে ছিল ছয় হাজারের মতো চিঠি। তার কোনটি আবার ২০০৪ সালেরও আগের। দেখা গেছে অনেক চিঠির লেখা মুছে গেছে, এতোটাই বিবর্ণ হয়ে গেছে যে লেখা পড়া যাচ্ছে না। কোনও কোনও চিঠি খেয়ে ফেলেছে পোকায়। তার মধ্য থেকে দেড় হাজারের মতো চিঠি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

ডাক বিভাগের ওই কর্মীর নাম জগন্নাথ পাঠান। তিনি ছিলেন ওই শাখার সহকারী পোস্ট মাস্টার। গত এক দশক ধরে তিনি ওই গ্রামে একাই কাজ করে গেছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, এসব চিঠি বিতরণের ব্যাপারে তিনি অলস হলেও বেশ চালাক ছিলেন। রেজিস্টার্ড চিঠিগুলো তিনি ঠিকই বিতরণ করেছেন। কারণ তিনি জানতেন প্রেরক এই চিঠি ট্র্যাক করবেন। তবে সাধারণ চিঠিগুলোর শেষ ঠিকানা ছিল ওই অফিসের গুদামঘর। তিনি কেন এসব বিতরণ করেননি সেটা এখনও পরিষ্কার নয়।

হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ডাক বিভাগের ওই কর্মী আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, গত কয়েক বছর ধরে তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলেন না। আর এ কারণে তিনি এসব চিঠি বিতরণ করতে পারেননি। তবে এতো বছরেও কোনও প্রেরক বা প্রাপক কেন অভিযোগ করেননি তা কর্তৃপক্ষকে বিস্মিত করেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, এখন যেসব চিঠির মর্ম উদ্ধার করা যাবে সেগুলো প্রাপকের কাছে সরবরাহ করা হবে। একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘একটি চিঠি আছে ২০১১ সালের। স্থানীয় এক ছেলে ভারতীয় নৌবাহিনীতে আবেদন করলে তারা তার জবাব দিয়েছিল।’ তবে এটাও ঠিক যে বেশিরভাগ চিঠিই আর প্রকৃত ঠিকানায় পৌঁছাবে না। কারণ খামের ওপর যেসব নাম ও ঠিকানা লেখা ছিল সেগুলো মুছে গেছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।