ভারতে পাঁচ অ্যাকটিভিস্টকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ আদালতের

সন্ত্রাসবাদ ও মাওবাদী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া পাঁচ ভারতীয় অ্যাকটিভিস্টকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তাদের গ্রেফতারকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পিটিশনের জবাব দিতে মহারাষ্ট্র সরকারকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৯ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

এই বছরের শুরুতে মহারাষ্ট্র রাজ্যে বর্ণভিত্তিক সহিংসতায় উস্কানির অভিযোগে মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) ৫ অ্যাকটিভিস্টকে গ্রেফতার করে পুনে পুলিশ। এদের মধ্যে শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন অফ সিভিল লিবার্টিজ বা পিইউসিএলের প্রধান সুধা ভরদ্বাজ,প্রাবন্ধিক ও মানবাধিকার কর্মী গৌতম নওলাখা, মাওবাদীদের সমব্যথী বলে পরিচিত কবিভারভারা রাও রয়েছেন। এর আগে একই ঘটনায় গত জুনেও পাঁচজনকে আটক করা হয়।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
বুধবার (২৯ আগস্ট) পাঁচ অ্যাকটিভিস্টকে আদালতে হাজির করা হয়। ভারতের প্রধান বিচারপতি দিপক মিশরার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ তাদেরকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দেয়। এর মানে হলো, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যে তিন অ্যাকটিভিস্টকে পুনেতে নেওয়া হয়েছে তাদেরকে এখন নিজ নিজ বাড়িতে ফেরত পাঠাতে হবে। অভিযুক্ত এই বিশিষ্টজনদের গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে বুধবার মামলা দায়ের হয় দেশের শীর্ষ আদালতে। এ মামলার শুনানিতে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচুর বলেন, ‘ভিন্নমত হলো গণতন্ত্রের সেফটি বাল্ব। যদি সেফটি বাল্ব না থাকে তবে প্রেসার কুকারের বিস্ফোরণ হবে।’

ভারতের পুলিশ বলছে, এই অ্যাকটিভিস্টরা গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ভারতের উচ্চ বর্ণের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক সময়ের অচ্ছুত দলিত সম্প্রদায়ের এক গণজমায়েতে উস্কানি দিয়েছিলেন। ওই জমায়েতের পর দলিত সম্প্রদায় ও ডানপন্থি গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে অন্তত একজন নিহত হয়। কোরেগাও যুদ্ধের ২০০ বছর পূর্তি স্মরণে মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে ওই জমায়েত হয়েছিল। ওই যুদ্ধকে ধরা হয় উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের বিরুদ্ধে দলিত সম্প্রদায়ের প্রথম যুদ্ধ। ওই যুদ্ধের ২০০তম বার্ষিকী স্মরণ অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করেছিল ডানপন্থি কয়েকটি গ্রুপ। স্মরণ অনুষ্ঠানের পরদিন দলিত সম্প্রদায় ও ডানপন্থি গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে অন্তত একজন নিহত হয়।

পুনে শহরের পুলিশ বলছে ওই ঘটনা তদন্তের সূত্রে এর আগে কয়েকজন সামাজিক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকেই যেসব ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে তাদের বাড়িতেই মঙ্গলবার তল্লাশী অভিযান চালানো হয়।

তবে সমালোচকরা বলছেন ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) চ্যালেঞ্জ করাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। বুকারজয়ী লেখক অরুন্ধতী রায় বিবিসিকে বলেছেন, যারা ন্যায়বিচার ও হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন কর্মকর্তারা তাদরেই গ্রেফতার করছে। তিনি বলেন, যারা প্রকাশ্যে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদের গ্রেফতার না করে পুলিশ দলিতদের অধিকার রক্ষায় লড়াই করা আইনজীবী, লেখক, কবিদের গ্রেফতার করছে। এটিই বলে দিচ্ছে ভারত কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছে।