আসামের নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে কলকাতায় বিক্ষোভ

ভারতের আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ যাওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় এক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা ত্রুটিপূর্ণ এনআরসি বাতিলের পাশাপাশি বিজেপিকে হটানোর ডাক দেন।

12বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার বহন করে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভের জানান দেন বিক্ষোভকারীরা।

এনআরসি’র নামে বাঙালিদের হয়রানি করা চলবে না’, ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ কর, দেশে কল্যাণের জন্য কাজ করো’, ‘নিরপেক্ষভাবে তথ্য যাচাই করে নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে’, ‘এনআরসি ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করতে হবে’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে নিয়ে লোকজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। মিছিল শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিক দাহ করেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে মুসলিমদের পাশাপাশি দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

বিক্ষোভ শেষে এক জমায়েতে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘অনেক আদিবাসী ভাই-বোনেরা এখানে আছেন। যাদের কোনও নথি নেই, তাহলে তাদের কী বাংলাদেশে পার করে দেবে মোদি সরকার? মুসলিম হয়ে ওয়াদা করছি যে, আমরা আদিবাসী ভাইবোনদের পাশি আছি। কোনওভাবেই তাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার, জুলুম, তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কোনও রকম ষড়যন্ত্র আমরা বরদাস্ত করবো না, মেনে নেবো না।’

আসামের করিমগঞ্জ উত্তরের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ তার ভাষণে বলেন, “আমার খুব দুঃখ হয় যে, ২০১৪ সালের ভোটার লিস্ট অনুযায়ী আমরা ভোট দিয়েছি। ২০১৬ সালের ভোটার লিস্টে নাম আছে। ২০১৮ সালের লিস্টেও নাম আছে। কিন্তু সেই মানুষদেরও আবার নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হয়! বারবার আসামের বাঙালিদের এভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হচ্ছে। নথিপত্র কেবল বাঙালিদের জন্য দরকার, কিন্তু কিছু মানুষের জন্য নথির কোনও দরকার হয় না। যাদের নাম নেই তারা যখন এনআরসি কেন্দ্রে কারণ জানতে যাচ্ছেন তাদেরকে বলা হচ্ছে, ‘টেকনিক্যাল এরর’, ‘নো রিজন’ ইত্যাদি। কিন্তু এসব তো তাদের সমস্যা। আমাদের কেন সেজন্য দুর্ভোগে পড়তে হবে?”

জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ফর বাঙালি রিফিউজিস-এর সর্বভারতীয় সভাপতি সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘দলিত ও মুসলিমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে কে কী আইন করলো তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। সেজন্য দলিত ও মুসলিমদের একে অন্যের সমস্যায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার অঙ্গীকার করতে হবে।’

বিক্ষোভ সমাবেশে সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, জামায়াতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি মুহাম্মদ নূরুদ্দিন, আসামের করিমগঞ্জ উত্তরের  বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ফর বাঙালি রিফিউজিস-এর সর্বভারতীয় সভাপতি সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস, স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন (এসআইও) পশ্চিমবঙ্গের সম্পাদক শেখ খালিদ আলী, এসআইও’র জনসংযোগ সম্পাদক সুজাউদ্দিন  আহমেদ, ‘সদ্ভাবনা মঞ্চ’-এর রাজ্য আহ্বায়ক মুহাম্মদ তাহেরুদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: পার্স টুডে।