বর্ণবাদের শিকার যুক্তরাজ্যের অশ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকরা: বিএমএ

সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে’ (এনএইচএস) কর্মরত কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (বিএএমই)  অর্থাৎ অশ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকদের বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির চিকিৎসকদের নেতৃস্থানীয় সংগঠন ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন’ (বিএমএ)। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে তারা জানিয়েছে, অবচেতনে থেকে যাওয়া বর্ণবাদের শিকার হতে হচ্ছে এনএইচএসে কর্মরত অশ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকদের। এসব চিকিৎসকদের অনেকেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। বিএমএর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বর্ণবাদের পাশাপাশি ভয় ও দোষারোপের সংস্কৃতির কারণে অশ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকরা এনএইচএসে অসুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। নৃতাত্ত্বিকভাবে সংখ্যালঘু চিকিৎসকদের মধ্যে মাত্র অর্ধেক চিকিৎসক মনে করেন, তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে যথাযথ সম্মান পান এবং অফিস তাদেরকে নিজের মনে করে। অশ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকরা পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ এবং রোগীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে অবচেতনে বিদ্যমান বর্ণবাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য তুলে ধরেছেন।’BMAlogo

ব্রিটিশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রধান চাঁদ নাগপাল বলেছেন, এনএইচএসে কর্মরত চিকিৎসকদের এক তৃতীয়াংশ অশ্বেতাঙ্গ হলেও সংস্থাটির উচ্চতর প্রশাসনিক পদে তাদের উপস্থিতি তাদের মোট সংখ্যার তুলনায় প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। এনএইচএসের মাত্র সাত শতাংশ অশ্বেতাঙ্গ চিকিৎসক সংস্থাটির উচ্চপদে আসীন হতে পেরেছেন। এসব চিকিৎসকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয় এবং প্রায়ই তাদের বিরুদ্ধে পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জিএমসির কাছে অযথার্থ আচরণের অভিযোগ জমা পড়ে।

তার ভাষ্য, ‘অশ্বেতাঙ্গ বিএএমই চিকিৎসকরা মোট চিকিৎসকদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এবং তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন দিনের পর দিন। এতো নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার পরও তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই ‘জেনারেল মেডিক্যাল কাউন্সিলে’ (জিএমসি) অভিযোগ পাঠানো হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদেরকে কড়া শাস্তি ভোগ করতে হয়।

নাগপালের মতে, ‘এনএইচএসে কর্মরত অশ্বেতাঙ্গ চিকিৎসা কর্মীদের অপরাপর কর্মীদের কাছ থেকে অনেক বেশি তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়। পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের ফলাফল অন্যান্যদের চেয়ে খারাপ। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও তাদেরকে অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে রাখা হয়। স্বাধীন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এই পিছিয়ে থাকার কারণ তাদের যোগ্যতার অভাব নয়। একুশ শতকে এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ নাগপাল নিজেও এনইচএসের চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘ ৩০ বছর চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।

এ বছরের শুরুতে নাগপালের উদ্যোগে ‘কেয়ারিং, সাপোর্টিভ, কোলাবরেটিভ?’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য যুক্তরাজ্য জুড়ে কর্মরত চিকিৎসকদের কাছ থেকে তাদের কর্মস্থলের অভিজ্ঞতা শোনা এবং তারা কীভাবে এনএইচএসকে দেখতে চান তা জানা। ব্রিটিশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করার বিষয়ে অশ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকদের মধ্যে অনেক বেশি ভীতি কাজ করে। এই ভয়ের কারণ হচ্ছে, তাদেরকেই বেশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হয় এবং এ বিষয়ে অভিযোগ করলে উল্টো তাদেরকেই ভুক্তভোগী হতে হয়।’

শ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক অশ্বেতাঙ্গ চিকিৎসক তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হওয়াকে সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকদের মধ্যে যেখানে ৭ শতাংশ এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন  সেখানে অশ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকদের ১৮ শতাংশ এ বিষয়টিকে সমস্যা মনে করেন। সম্প্রতি বিএমএ প্রায় আট হাজার চিকিৎসকের ওপর জরিপ চালিয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাদের কর্মপরিবেশ সম্পর্কে। এসব চিকিৎসকদের মধ্যে তরুণ চিকিৎসক থেকে শুরু করে জেনারেল প্র্যাক্টিশিওনারসহ হাসপাতালের চিকিৎসকরাও অংশ নিয়েছিলেন।