পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠক বাতিল ভারতের

পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে সম্মত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে ভারত। বৃহস্পতিবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য বৈঠকের কথা জানালেও শুক্রবার  কাশ্মিরে সে দেশের তিন পুলিশের লাশ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই সিদ্ধান্ত বদলের ঘোষণা আসে। পুলিশ হত্যার ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও পাকিস্তানের ‘অসৎ উদ্দেশ্যের’ অংশ হিসেবে দেখছে ভারত। তারা বলছে, সন্ত্রাস আর আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।

noname

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ইমরান খানকে চিঠি লিখে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই চিঠিতে মোদি বলেছিলেন, গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে শান্তি স্থাপনই সুসম্পর্ক রক্ষার একমাত্র পথ। উত্তরে ইমরান খানের পক্ষ থেকে লেখা চিঠিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি জানানো হয় পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত। চিঠিতে বন্ধ থাকা সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শুরু করার প্রস্তাবও দেন ইমরান খান। ইমরানের চিঠির ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্ভাব্য বৈঠকের কথা জানান। তিনি বলেন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির মধ্যে বৈঠক হবে।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচনায় সম্মত হওয়ার একদিনের মাথায় শুক্রবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে তিন পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই অপহরণ করা হয়েছিল চার পুলিশ সদস্যকে। অপহৃতদের একজন পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। এ ঘটনার পর  শুক্রবার বৈঠকের সিদ্ধান্ত বদলের ঘোষণা দিয়ে রবীশ কুমার বলেন, ‘ইমরানের চিঠি পেয়ে আমরা মনে করেছিলাম পাকিস্তান ইতিবাচক পথে হাঁটতে যাচ্ছে, নতুন কিছু শুরু হবে। কিন্তু না, এখন দেখছি ওই প্রস্তাবের পেছনে পাকিস্তানের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।’

ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, শুক্রবার সকালে যে তিন পুলিশ কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার হয়, তাঁদের শরীরে বুলেট ছিল। ভারতের অভিযোগ, এটি হিজবুল মুজাহিদীনের আক্রমণ। মাত্র দুই দিন আগে এই সংগঠনটি কাশ্মিরে থাকা ভারতীয় পুলিশ সদস্যদের হত্যার হুমকি দিয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে। মূলত ২০১৬ সালে এই সংগঠনটির শীর্ষ নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যু হলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির অঞ্চলের অবস্থা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ভারত ধারাবাহিকভাবে এই সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে। ২০১৫ সালে কাশ্মীরের উড়িতে অবস্থিত ভারতীয় সেনা চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৯ ভারতীয় সেনার প্রাণহানি ঘটেছিল। এর পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বন্ধ রয়েছে। ভারত ওই হামলার পেছনেও পাকিস্তানের মদদ আছে বলে অভিযোগ করছে।

এর আগে গত মঙ্গলবারও কাশ্মির সীমান্তে এক বিএসএফ সদস্যের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল। লাশ উদ্ধারের সময় তার গলায় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা না গেলেও ভারতের দাবি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ওই বিএসএফ সদস্য মারা যান। কারণ, ওই রাতে পাকিস্তানি সেনারা সংশ্লিষ্ট সীমান্তে বন্য হাতি তাড়াতে আগুন জ্বালিয়েছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পরপর ঘটে যাওয়া শুক্রবার ও মঙ্গলবারের এই দুটি ঘটনায় দুই দেশের মধ্যকার পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার মন্তব্য করেন, “এরকম একটি পরিবেশে কোনোরকম আলোচনা অর্থহীন”। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বৈঠক বাতিলের পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে দাবি করা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ চাপেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে ভারত।