আটক মার্কিন ধর্মযাজকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে তুরস্কের আদালত: এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, তার দেশে আটক মার্কিন খ্রিস্টান ধর্মযাজক অ্যান্ড্রু ব্রানসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে তুর্কি আদালত। এ সিদ্ধান্ত কোনও রাজনীতিক নেবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

nonameএর একদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছিলেন, তিনি আশাবাদী ছিলেন যে তুরস্ক এ মাসেই ওই ধর্মযাজককে মুক্তি দেবে।

বর্তমানে গৃহবন্দি থাকা ওই যাজককে কেন্দ্র করে তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে মারাত্মক অবনতি ঘটে। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে তুর্কি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই ঘোষণার পর তুর্কি মুদ্রা লিরার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দরপতন ঘটে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ঘোষণা দেন, ওই যাজককে মুক্তি দিলে তাৎক্ষণিকভাবে লিরার দরপতন ঠেকাতে সক্ষম হবে তুরস্ক।

মঙ্গলবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এরদোয়ান বলেন, ‘এটা বিচারিক বিষয়। ব্রানসন সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে আটক রয়েছেন। আগামী ১২ অক্টোবর আরেকটি শুনানি রয়েছে। আমরা জানি না, আদালত কী সিদ্ধান্ত দেবেন। এই রায় নিয়ে রাজনীতিকরা কিছু বলবেন না।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের আদালতে অ্যান্ড্রু ব্রানসনের ৩৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ব্রানসন।

রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেওয়ার অধিকার আমার নেই। আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। অপেক্ষা করুন এবং দেখুন আদালত কী সিদ্ধান্ত দেন।’

২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে তুরস্কে আটক ব্রানসনের বিচার চলছে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের মন্তব্য, ‘ধর্মযাজক ব্রানসনকে মুক্তি না দিয়ে তুর্কি সরকার বড় ধরনের ভুল করেছে। এই ভুল নিয়েই প্রতিটি দিন অতিবাহিত হচ্ছে। এই সংকট তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা যায় যদি তারা একজন ন্যাটো মিত্রের মতো, পশ্চিমা দুনিয়ার অংশীদার হওয়ার মতো ঠিক কাজটি করে এবং শর্তহীনভাবে ব্রানসনকে মুক্তি দেয়।’

চলতি বছরের লিরার দর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। সংকট মোকাবিলায় তুরস্কের জন্য ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগসহ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয় কাতার। ওই ঘোষণার পর নিম্নমুখী প্রবণতার বিপরীতে তুর্কি মুদ্রার দর বাড়তে শুরু করে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও মিসরের মতো মার্কিন মিত্রদের অবরোধে থাকা কাতার এই সংকটে হস্তক্ষেপ করায় সন্দেহ প্রকাশ করেন বোল্টন। তিনি বলেন, 'তাদের প্রতিশ্রুত বিনিয়োগের পরিমাণ তুরস্কের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলার মতো বলে মনে করি না। এতে কোনও লাভ হবে না তবে তাদের বিনিয়োগের ফলাফল কী হয় আমরা আসলে তা খেয়াল রাখবো।'

ওয়াশিংটনের শুল্ক আরোপের কারণে দরপতন ঠেকাতে গত ১২ আগস্ট মার্কিন ডলারের বদলে নিজস্ব মুদ্রা লিরা’র মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘোষণা দেন এরদোয়ান। নিজ দল জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির এক সমাবেশে তিনি বলেন, চীন, রাশিয়া, ইরান ও ইউক্রেনের মতো শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তুরস্ক।