মাদক সরবরাহের দায়ে যুক্তরাজ্যে ৬ ব্রিটিশ বাংলাদেশির কারাদণ্ড

মাদক সরবরাহের একাধিক অপরাধে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬ ব্রিটিশ নাগরিককে মোট ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে যুক্তরাজ্যের একটি আদালত। পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় মাদক সরবরাহ নিয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের চার মাস নজরদারির ওপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন করা হয়। তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই কোকেইন ও হেরোইন সরবরাহের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।noname
কারাদণ্ড প্রাপ্তদের  মধ্যে ২৩ বছর বয়সী জুনেল আহমেদকে তিন বছর তিন মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কোকেইন ও হেরোইন সরবরাহের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় তাকে এই দণ্ড দেওয়া হয়। একই ধরণের অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে ২৩ বছর বয়সী মাহমুদুর হাসানকে তিন বছরের দণ্ড দেওয়া হয়। ২৫ বছর আলমগীর হোসেনকে দেওয়া হয়েছে দুই বছরের কারাদণ্ড। এছাড়া অপর তিনজনকে দেওয়া হয়েছে বিলম্বিত দণ্ড। কঠোর শর্তের আওতায় তাদের অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণে রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ওই শর্ত ভঙ্গ হলে তাদের কারারুদ্ধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে আদালতের রায়ে।

বিলম্বিত দণ্ড পাওয়া তিনজনের মধ্যে রয়েছেন ১৮ বছর বয়সী রুহেল হোসেন। হেরোইন ও কোকেইন সরবরাহের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাকে দুই বছরের বিলম্বিত দণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই দণ্ড পাওয়া অপর দুইজন আতিফুর রহমান ও মোহাম্মদ শেরওয়ান চৌধুরী। এর মধ্যে শেরওয়ান চৌধুরীর ওপর তিন মাস ইলেকট্রনিক কার্ফু ও দেড়শো ঘণ্টার সমাজসেবার দণ্ড দেওয়া হয়েছে। ইলেকট্রনিক কার্ফুর আওতায় তার গতিবিধির ওপর নজরদারি চালাতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হবে।

টাওয়ার হ্যামলেটস ক্রাইমের মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মাইক হ্যামার বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসের জন্য এটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটা অভিযান। এসব ব্যক্তিদের আমাদের রাস্তা থেকে সরাতে পারায় স্থানীয় জনতা ও সর্বোপরি লন্ডনের মানুষ অভূতপূর্ব সুফল পাবে। তারা সবাই কোকেইন ও হেরোইন সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর তাদের কারাবন্দি রাখতে পারার কারণে এসব মাদকের সরবরাহ দারুণভাবে বিঘ্নিত হবে।

মাইক হ্যামার বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের লক্ষ্য করে এই অভিযান চালানো হয়। এই অঞ্চলের মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ফলে আমরা সংশ্লিষ্ট অপরাধ, সহিংস অপরাধ ও সমাজবিরোধী আচরণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক ফলাফল পাবো’।

গত জুন ও জুলাই মাসে পূর্ব লন্ডনে ধারাবাহিক অভিযান ও আটকের ভিত্তিতে এসব ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল। লন্ডনে বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত সবচেয়ে বড় এলাকা হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় সমাজবিরোধী আচরণ, সহিংসতা ও মাদক সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ার প্রেক্ষাপটে ওই অভিযান চালানো হয়।

পুলিশের সহায়তায় চালানো ‘কন্টিনাম’ নামের ওই অভিযানে ৫০টি ঠিকানায় তল্লাশি চালানো হয়। কর্মকর্তারা নগদ ৬০ হাজার ইউরো, আধাকেজিরও বেশি নিষিদ্ধ ঘোষিত ক্লাস-এ পর্যায়ের মাদক এবং চারটি চেতনানাশক বন্দুক জব্দ করেন।

টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসের জন্য এটা একটা বড় অর্জন। বাসিন্দারা আমাদের বলেছেন সমাজবিরোধী আচরণ ও মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধ তাদের বড় উদ্বেগের কারণ। পুলিশেহর সহায়তায় আমরা তা দূর করতে পারছি। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে আমাদের বার্তা পরিষ্কার- যে মাদক কেনাবেচা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর আসমা বেগম বলেন, মাদক ব্যবসা আমাদের সম্প্রদায়কে শেষ করে ফেলছে। আর আমাদের কাউন্সিল ও পুলিশের অগ্রাধিকার হলো মাদক বাজার ও বিক্রিকে বিঘ্নিত করা।

কারাদণ্ড পাওয়া ৬ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ছাড়াও ওই অভিযানে আরও কয়েকজনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ১৮ বছরের মাসুম আলী ও ৪৭ বছর বয়সী দিলশাদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আগামী মাসে দণ্ড ঘোষণা করা হবে। তাদের বিরুদ্ধেও হেরোইন ও মাদক সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে।