কাভানাহ’র বিরুদ্ধে তদন্ত: এফবিআই-এর অস্বচ্ছতায় বাড়ছে ধোঁয়াশা

ট্রাম্প মনোনীত বিচারপতি ব্রেট কাভানাহ’র বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের তদন্ত শেষে  হোয়াইট হাউসকে ও সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই। প্রতিবেদনটি এখন সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির কাছে। সেই প্রতিবেদনে কী আছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে  প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার আগেই এফবিআই-এর তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাদী পক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ তুলেছেন, অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তদন্ত চলমান থাকা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক অভিযোগকারীদের একজনকে নিয়ে বিদ্রুপ করতেও দেখা গেছে। এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের এক নিজস্ব অনুসন্ধান শেষে জানিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই তার সারসংক্ষেপ হোয়াইট হাউসকে পাঠানো হয়েছে। কাভানাহ’কে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এদিকে প্রতিবেদনটি জনসম্মুখে প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তও এর স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।ট্রাম্প মনোনীত বিচারপতি ব্রেট কাভানাহ

গত জুলাইয়ে ব্রেট কাভানাহকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে মনোনীত করেন ট্রাম্প। চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেতে সিনেটের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সিনেটের অনুমোদন পাওয়ার আগে কাভানাহর বিরুদ্ধে তিনজন নারী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন। অভিযোগকারী তিন নারীর একজন হলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টিন ব্লেজি ফোর্ড। সম্প্রতি সিনেট কমিটিতে অধ্যাপক ফোর্ড অভিযোগ করেন, বিচারপতি কাভানাহ কিশোর বয়সে তার উপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছিলেন। তবে সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাভানাহ। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির কাছে অভিযোগ নিয়ে তিনি ও কাভানাহ উভয়ই সাক্ষ্য দেন। পরে এফবিআইকে এ ঘটনা ‘খতিয়ে দেখা’র নির্দেশ দিতে বাধ্য হন ট্রাম্প। শুক্রবারের (৫ অক্টোবর) মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় এফবিআইকে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই তদন্ত প্রতিবেদন হাজির করেছে তারা।

এফবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও তা নিয়ে থেকে যাচ্ছে ধোঁয়াশা। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ফোর্ডের আইনজীবীরা। তাদের দাবি, অভিযোগকারী ফোর্ড ও অভিযুক্ত কাভানাহ’র সাক্ষ্যগ্রহণ না করেই এফবিআই তদন্ত করেছে। আর এ দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ না করে তদন্ত আদৌ কতটা নিখুঁত হবে তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছিলেন তারা। মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) আইনজীবী মাইকেল ব্রোমউয়িচ ও ডেব্রা কাৎজ অভিযোগ করেন, শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে ফোর্ডের সঙ্গে বসতে, সাক্ষীদের শনাক্ত করতে ও আলামত সংগ্রহের জন্য এফবিআইয়ের তদন্তকারীদের প্রস্তাব দিচ্ছেন তারা। তদন্তে নিয়োজিত এফবিআই কর্মকর্তাদের পরিচয় জানানোর জন্যও অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। অভিযোগ জানিয়ে এফবিআইকে পাঠানো চিঠিতে আইনজীবীরা লিখেছেন, ‘এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তদন্তে নিয়োজিত কারও কাছ থেকেই আমরা সাড়া পাইনি। ফোর্ডের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি, সে ব্যাপারেও সাড়া পাইনি। বিকেলে আমরা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারলাম ফোর্ড কিংবা বিচারপতি কাভানাহ, কারও সাক্ষাৎকার নেওয়ার ইচ্ছেই এফবিআইয়ের নেই। আমরা আশা করছি, এ সংবাদ প্রতিবেদনটি যেন সঠিক না হয়। আমরা মনে করি না, তার (ফোর্ড), বিচারপতি কাভানার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য না নিয়ে এফবিআই এর পক্ষে যথাযথভাবে তদন্ত পরিচালনা করা সম্ভব হবে।’ সূত্রকে উদ্ধৃত করে এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়,বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির সামনে ফোর্ড যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাতে নতুন করে তার কাছ থেকে এফবিআই-এর সাক্ষাৎকার নেওয়া অপ্রয়োজনীয় মনে করছে হোয়াইট হাউস।

তদন্ত চলাকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখা গেছে কাভানার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগকারী ফোর্ডকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতে। সবমিলে কাভানাহকে নিয়ে হোয়াইট হাউসের অবস্থানও প্রশ্নহীন থাকেনি।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সিনেট কমিটিতে পাঠানোর আগে এফবিআইয়ের সাম্প্রতিক তদন্তের সারসংক্ষেপ হোয়াইট হাউসকে অবহিত করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা তা নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। সেখানে কাভানাহকে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এফবিআই-এর প্রতিবেদনটি নিয়ে সিনেট কমিটিতেও রয়েছে গোপনীয়তা। প্রতিবেদনটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না। অবাঁধাইকৃত কাগজে হাজির করা এই প্রতিবেদনের কোনও অনুলিপি তৈরি করা হবে না। ক্যাপিটল বিল্ডিং এর বেজমেন্টের সুরক্ষিত একটি কক্ষে এ নিয়ে পর্যালোচনা হবে। এনবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্রাসলি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) সকাল আটটায় এবং র‍্যাংকিং ডেমোক্র্যাট ডিয়ানে ফেইনস্টেইন সকাল ৯টায় প্রতিবেদনটি দেখবেন। এরপর সকাল ১০টায় প্রতিবেদনটি কমিটির রিপাবলিকান সদস্যদের এবং ১১টায় ডেমোক্র্যাট সদস্যদের হাতে পৌঁছাবে।