‘খাশোগিকে অপহরণের সৌদি চক্রান্ত সম্পর্কে জানতো যুক্তরাজ্য’

ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে অপহরণের সৌদি চক্রান্ত সম্পর্কে আগে থেকে জানতো যুক্তরাজ্য। ২ অক্টোবর সৌদি কনস্যুলেটে নির্মমভাবে খুন হওয়ার তিন সপ্তাহ আগেই তাক অপহরণের সৌদি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানতে পারে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সানডে এক্সপ্রেস।

জামাল খাশোগিএকটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ২ অক্টোবর খাশোগি সৌদি কনস্যুলেটে যাওয়ার তিন সপ্তাহ আগে থেকে আমরা প্রাথমিকভাবে সচেতন ছিলাম যে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কিছু ঘটতে যাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সৌদিতে ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থা একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

সূত্রটি বলছে, আমরা জানি এই নির্দেশ এসেছে রাজপরিবারের একজন সদস্যের কাছ থেকে। কিন্তু এর সঙ্গে সরাসরি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার সরাসরি কোনও তথ্য নেই।

সূত্রের ভাষ্যমতে, ২ অক্টোবর জামাল খাশোগিকে হত্যার একদিন আগেই সৌদি গোয়েন্দাদের তুরস্ক যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারে যুক্তরাজ্য। তাদের তুরস্ক যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাদের চ্যানেলের মাধ্যমে এ ব্যাপারে সৌদি আরবকে সতর্ক করেছিল। বলা হয়েছিল যে, এটি কোনও ভালো চিন্তাভাবনা নয়। কিন্তু পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে দেখা যায়, সে সতর্কতা উপেক্ষা করা হয়েছিল।

এদিকে বাহরাইনে এক সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার স্বচ্ছ ও পরিপূর্ণ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস।

তুর্কি বাগদত্তার সঙ্গে বিয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে গত ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করার পর নিখোঁজ হন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক ও স্বেচ্ছানির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। শুরুতে অস্বীকার করলেও ১৯ অক্টোবর  সৌদি জানায়, কনস্যুলেটের মধ্যেই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে খাশোগির মৃত্যু হয়। এর দুদিন পরই খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তাদের দাবি ছিল, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ভুলবশত তার মৃত্যু হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সৌদি কর্তৃপক্ষ এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

জিম ম্যাটিস বলেন, শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে তিনি সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়েরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে তিনি খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনারা যা জানেন, আমরা একই বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। তা হলো এই ঘটনার স্বচ্ছতা এবং পূর্ণ তদন্তের প্রয়োজনীয়তা।’ তিনি আরও বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুবায়ের এই বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত। তিনি বলেছেন, কী ঘটেছে তা আমাদের জানতে হবে আর এটা খুবই সহযোগিতাপূর্ণ হতে হবে। তার সঙ্গে কোনও বিষয়ে দ্বিমত হয়নি।’

এই ঘটনার পর ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র তার সহায়তা কমাবে কিনা জানতে চাইলে ম্যাটিস বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবের প্রতিরক্ষার বিষয়ে সহায়তা অব্যাহত রাখবো।’

শনিবারের ওই সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের জানান, খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের সৌদি আরবেই বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এর আগে খাশোগি  হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন ১৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুরস্কের কাছে হস্তান্তর করতে রিয়াদের প্রতি আহ্বান জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। তার ওই আহ্বানের জবাবে জুবায়ের বলেন, এই ব্যক্তিরা সৌদি নাগরিক। তারা সৌদিতে আটক রয়েছে। তদন্ত কাজ চলছে এবং সৌদিতেই তাদের বিচার হবে।

একই সম্মেলনে জিম ম্যাটিস বলেছিলেন, খাশোগির হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করেছে। এ খুনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আরও পদক্ষেপ নিতে পারে। তিনি বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইতোমধ্যেই কিছু সৌদি ভিসা বাতিল করেছেন। এর বাইরেও আরও বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সূত্র: আল জাজিরা।