সাজা থেকে অব্যাহতি পেলেন শরণার্থীদের লাথি মারা সেই হাঙ্গেরীয় সাংবাদিক

সিরীয় শরণার্থীদের লাথি দিয়ে দুনিয়াজুড়ে নিন্দার ঝড় তোলা হাঙ্গেরিয়ান সাংবাদিককে সাজা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে সে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। নিম্ন আদালত পেত্রা লাসজলো নামের ওই নারী ফটোসাংবাদিককে তিন বছর নজরদারিতে রাখার রায় দিয়েছিলো। তবে হাঙ্গেরির সর্বোচ্চ আদালত সেই রায় পরিবর্তন করে তাকে আইনের দৃষ্টিতে নির্দোষ ঘোষণা করেছে। রায় ঘোষণা করতে গিয়ে আদালত জানিয়েছে, পেত্রা লাসজলোর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পর্যাপ্ত আলামত পাওয়া যায়নি।

skynews-petra-laszlo-hungary_4470864

অভিযুক্ত ওই নারী সাংবাদিক হাঙ্গেরির এন ১ টিভি’র ক্যামেরাপারসন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তিনি হাঙ্গেরিতে পুলিশের ধাওয়ায় পলায়নপর শরণার্থীদের দৃশ্য ধারণ করছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে দিগ্বিদিক ছুটে যাওয়া শরণার্থীদের ধাক্কা লাগে। আর এতে চরম ক্ষুব্ধ হন এই নারী ফটোসাংবাদিক। ক্ষুব্ধ পেত্রা লাসজলো প্রথমে দুই শিশুকে লাথি মারেন। তারপর সন্তানকে কোলে নিয়ে পুলিশের হাত থেকে পলায়নরত এক বাবাকে ল্যাং মারেন। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় দৃশ্যটি ধরা পড়লে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি দ্রুত ভাইরাল হয়। দুনিয়াজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পেত্রাকে চাকরিচ্যুত করে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।

অসদাচরণের অভিযোগ এনে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পেত্রা লাসজলোর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত নিম্ন আদালতের রায়ে তাকে ৩ বছর আদালতের নজরদারিতে রাখার সাজা ঘোষণা করা হয়। তবে গতকাল ঘোষিত (৩০ অক্টোবর, মঙ্গলবার) সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ঘটনাটি পুলিশের কাছ থেকে পালাতে থাকা শত শত অভিবাসীদের কারণেই হয়েছে।  লাসজলো নৈতিকভাবে ভুল ছিলেন, কিন্তু কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেননি।   তিনি নিম্ন আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার পাননি। আদালত এক বিবৃতিতে জানায়, ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সহিংসতার পর্যাপ্ত আলামত না থাকায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এনওয়ানটিভিতে কাজ করছেন লাসজলো। তিনি বলেন, আমি পেছনে ঘুরে দেখতে পাই আমার দিকে শত শত মানুষ তেড়ে আসছে। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’  

ফটোসাংবাদিক পেত্রা লাসজলো’ই শুধু নয়, শরণার্থীদের প্রতি হাঙ্গেরি সরকারের আচরণও বেশ রূঢ়। ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক ফুটেজে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানার পশুদের মতো বাইরে থেকে শরণার্থীদের দিকে খাবারের ব্যাগ ছুড়ে মারা হচ্ছে। ওই ভিডিওটি ধারণ করেন এক অস্ট্রীয় নারী। তিনি সে সময় বলেন, আশ্রয়শিবিরে শরণার্থীদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের মার্চে হাঙ্গেরির পুলিশের একজন মুখপাত্র আল জাজিরাকে জানান, হাঙ্গেরি-সার্বিয়া সীমান্তে কয়েকটি ফাটল রয়েছে। প্রতিদিন সীমান্ত পারাপারের সময় প্রায় ১০০ থেকে ২০০ জন মানুষকে পুলিশ আটক করে। ২০১৫ সালে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৩৫ জন আশ্রয় লাভের জন্য আবেদন করলেও কেবলমাত্র ১৪৬ জনের আবেদন গ্রহণ করা হয়। আরও ৩৬২ জনকে অস্থায়ীভাবে সেখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।