জামিন পেলেন ধর্ষণে অভিযুক্ত অধ্যাপক তারিক রামাদান

ধর্ষণের অভিযোগে প্রায় দশ মাস আটক থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন প্রখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ তারিক রামাদান। তার আইনজীবী জানিয়েছেন তদন্ত চলমান থাকলেও বৃহস্পতিবার প্যারিসের একটি আপিল আদালত ৫৬ বছর বয়সী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক অধ্যাপকের জামিন মঞ্জুর করে।তারিক রামাদান
বৃহস্পতিবার আদালতের শুনানি মিসরীয় বংশোদ্ভূত এই ইসলামি চিন্তাবিদ বলেন, আমি কোথায় পালাবো? আইনজীবী জানিয়েছেন জামিনের শর্ত হিসেবে তাকে তিন লাখ ইউরো ও পাসপোর্ট জমা দেওয়া ছাড়াও সপ্তাহে একদিন পুলিশের কাছে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে  রামাদানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন হিন্দা আয়ারি ও নাম প্রকাশ না করা আরেক নারী। অভিযোগের ভিত্তিতে রামাদানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক তদেন্তর অংশ হিসেবে  দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ তারিক রামাদানকে তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে রামাদানের  বিচার শুরুর আদেশ দেয়। একইসঙ্গে তাকে অনিদিষ্ট সময় পর্যন্ত কারাগারে পাঠানোরও আদেশ দেওয়া হয়।  

গত মাসে আদালতে রামাদান বলেন উভয়ের সম্মতি সাপেক্ষে ২০০৯ ও ২০১২ সালে ওই দুজনের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়েছিলেন তিনি।

সুইডেনে বেড়ে উঠলেও তারিক রামাদান ফ্রান্সের নাগরিক। মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা মিরসীয় ইমাম হাসান আল বান্নার নাতি তিনি। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিভিন্ন দেশে তিনি বেশ পরিচিত। উদারবাদী ইসলামের প্রচারক হিসেবে পশ্চিমা সমাজেও তার পরিচিতি উল্লেখযোগ্য।  তবে সমালোচকরা তার ধারণাকে ফরাসি ধর্মনিরপক্ষেতার সাপেক্ষে সঙ্গতিহীন বলে মনে করে। 

বৃহস্পতিবারের শুনানিতে তারিক রামাদান বলেন, আমি ফ্রান্সেই থাকবো আর আমার সম্মান ও নির্দোষীতার পক্ষে লড়াই করে যাবো।

রামাদানের আইনজীবী এমানুয়েল মার্সিগনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, রামাদানের মুক্তি প্রমাণ করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।

গত বছর #মিটু আন্দোলনের পর মামলা করা হয় রামাদানের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী দুই নারীর দাবি, ২০০৯ ও ২০১২ সালে তারা রামাদানের ধর্ষণের শিকার হন। ৪১ বছর বয়সী অভিযোগকারী হেন্দা আইয়ারি নারীবাদী আন্দোলনের কর্মী।  আগে রক্ষণশীল ইসলাম চর্চা করতেন। এখন তিনি লেস লিবারেট্রাইসিস নামের একটি নারী সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রামাদানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা, হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগ আনেন হেন্দা। তিনি অভিযোগ করেন, ২০১২ সালে একটি সম্মেলনের পর প্যারিসের একটি হোটেল কক্ষে তিনি রামাদানের হামলার শিকার হন। হেন্দা জানান, হার্ভে ওয়েইনস্টেইনের যৌন হামলা ও হয়রানির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর তিনি রামাদানের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। আনু্ষ্ঠানিকভাবে ২০ অক্টোবর তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। প্রথম অভিযোগের কয়েকদিনের মাথায় এক পঙ্গু ও ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত নারী রামাদানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও সহিংস হামলার অভিযোগ আনেন। এই নারীর অভিযোগ, ২০০৯ সালে লিও শহরে একটি হোটেল কক্ষে রামাদানের হাতে তিনি যৌন হয়রানির শিকার হন।