সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর দায়েরকৃত অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন আর্জেন্টিনার আদালত। এরইমধ্যে একজন বিচারক এ ইস্যুতে তুরস্ক, ইয়েমেন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তা নেওয়ার কথা বলেছেন। তাদের কাছ থেকে এ মামলা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আরিয়েল লিজু নামের ওই ফেডারেল জজের দফতর থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
শুক্রবার আর্জেন্টিনায় শুরু হতে যাওয়া জি টোয়েন্টি সম্মেলনকে সামনে রেখে এ মামলার উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৪ সালে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহর প্রতি অনুগত সেনা সদস্যদের সঙ্গে একজোট হয়ে সানাসহ দেশের বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সংঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে ইয়েমেন। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে ‘অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম’ নামে সামরিক অভিযান পরিচালনা শুরু করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী এ অভিযানে নিহত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিরোধযোগ্য রোগে মৃত্যু হয়েছে আরও ১০ হাজার মানুষের। গৃহহীন হয়েছেন কয়েক লাখ। ভয়াবহ বিমান হামলার তাণ্ডবে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষ।
ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া সম্প্রতি সৌদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়েও সমালোচনার মুখে রয়েছেন তিনি। এর মধ্যে এ সপ্তাহের শেষের দিকে আর্জেন্টিনায় আয়োজিত জি টোয়েন্টি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা বিন সালমানের। আর তার আগেই ইয়েমেন যুদ্ধে ভূমিকার জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়।
এক বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ বলেন, ‘মোহাম্মদ বিন সালমানের জানা উচিত যে আর্জেন্টিনায় গেলে তাকে অপরাধজনিত তদন্তের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।’ ৫৯ বছর বয়সী খাশোগি একসময় সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি থাকলেও এক পর্যায়ে সৌদি যুবরাজের কঠোর সমালোচকে পরিণত হন। গ্রেফতার এড়াতে দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাচনে চলে যান খাশোগি। দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন খাশোগি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে সৌদি আরব জানায়,ইস্তানবুলের কনস্যুলেটে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে খুন হন তিনি। এ ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও ওঠে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ সে অভিযোগ নাকচ করে আসছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, সৌদি আরবের ‘শীর্ষ পর্যায়’ থেকেই খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র: রয়টার্স।