জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের নীতিমালা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছালো বিশ্ব

দীর্ঘ আলোচনার পর জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের নীতিমালা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার একদিন পর শনিবার এ ইস্যুতে মতৈক্যে পৌঁছাতে সমর্থ হয় সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা।noname

৩ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এ সম্মেলন ১৪ ডিসেম্বর শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আশানুরূপ অগ্রগতিতে পৌঁছাতে না পারায় নির্ধারিত সময়ের পরও সম্মেলন অব্যাহত থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত শনিবার মতৈক্যে পৌঁছাতে সমর্থ হন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। যদিও আশঙ্কা করা হচ্ছিল, শেষমেষ এ এ সংক্রান্ত আলোচনা রবিবার পর্যন্ত গড়াতে পারে।

এবারের সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৫ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের নীতিমালা তৈরি করা, যাকে ‘রুলবুক' বলছেন আলোচকরা। কিন্তু শুক্রবার আলোচনার শেষ দিনে এসেও আলোচকরা নিশ্চিত হতে পারেননি যে, একটি রুলবুক পাওয়া যাবে। তবে শনিবার এ নিয়ে অনিশ্চয়তার আপাত অবসান হয়। তবে সমালোচকরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার বিপজ্জনক প্রভাব প্রতিরোধে এটি যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী নয়।

২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যত দ্রুত সম্ভব কার্বন নির্গমন কমানো এবং এই গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য আনার কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩ দশমিক ৬ ফারেনহাইট) 'বেশ নিচে' রাখার কথা বলা হয়।

জলবায়ু সম্মেলনে স্বাগতিক দেশ পোল্যান্ডের প্রতিনিধি মাইকেল কুর্তিকা বলেন, সুনির্দিষ্ট ও প্রযুক্তিগত চুক্তি চুক্তি খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। এই প্যাকেজের মাধ্যমে আপনারা সম্মিলিতভাবে হাজারটি ছোট ছোট পা সামনে এগিয়েছেন। আপনারা গর্ববোধ করতে পারেন।

এর আগে বুধবার জলবায়ু সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। ১৩০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার পরিমাণ কমাতে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু এ চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা হবে আত্মঘাতী। পোল্যান্ডের এ সম্মেলনে ব্যর্থ হলে তা সবুজ অর্থনীতির অপেক্ষায় থাকা মানুষের কাছে একটি বিপর্যয়মূলক বার্তা পাঠাবে।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ধকল থেকে পালিয়ে আসতে এটিই আমাদের জন্য শেষ সেরা সুযোগ। এই সুযোগ না নেওয়াটা শুধু অনৈতিক হবে না, বরং এটি হবে আত্মঘাতী।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত খুব একটা কিছু করতে পারছি না। এক্ষেত্রে আমাদের কাজের গতিও খুব একটা দ্রুত নয়।’

পোল্যান্ডের কাতোভিতাসায় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছে বিশ্বের ১৮৩টি দেশ। ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস’ বা কপ নামে পরিচিত জাতিসংঘের এই বার্ষিক সম্মেলনের ২৪তম আয়োজন এটি। প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী সম্মেলন ১৪ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল।

প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বের তাপমাত্রা শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে যা ছিল, তার চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়তে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্ভব হলে তা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এবারের জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের সিইও ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সতর্ক করে বলেছেন,‘এটা নিশ্চিত যে জলবায়ু পরিবর্তনের লাগাম টেনে ধরার সুযোগ থাকা প্রজন্মগুলোর মধ্যে আমরাই সর্বশেষ। যদি এখনই আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারি তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত প্রজন্মটা হবো আমরাই।’

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২১-২০২৫ সাল মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সংস্থাটি ১০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল দেবে। এই অর্থ জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কল্যাণে সমানভাবে ব্যয় করা হবে। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি।