পাকিস্তানে বিতর্কিত আদালত পরিচালনায় তহবিল দিচ্ছে যুক্তরাজ্য

বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আদালত পরিচালনায় পাকিস্তানকে তহবিল জোগান দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। গোপন এক ব্রিটিশ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এ তহবিল দেওয়া হচ্ছে। ‘আইনের শাসন’ প্রতিষ্ঠা কর্মসূচির আওতায় পাকিস্তানকে এ বরাদ্দ দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। তবে আইনি সহায়তা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, পাকিস্তানের ওই আদালতে এমন কিছু অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাদের দাবি, তহবিল জোগানোর মধ্য দিয়ে এর সঙ্গে সামিল হয়েছে যুক্তরাজ্যও। ওই সহায়তা কর্মসূচি সংক্রান্ত নথিকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এসব কথা জানিয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবাদ
পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৩১ জনকে। ২০১৭ সালে ১৮ জন এবং এ বছর এ পর্যন্ত ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সহায়তা কর্মসূচি সংক্রান্ত নথি প্রকাশ করা হয়। ওই নথি থেকে জানা গেছে, পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যুক্তরাজ্য সরকার ১ কোটি ৩ লাখ পাউন্ড খরচ করেছে। এর মধ্যে ৯৩ লাখ পাউন্ডই এসেছে বিদেশি সহায়তা বাজেট থেকে। যুক্তরাজ্য সরকার ২০১৬ সাল থেকে প্রকল্পটিতে সহায়তা দিয়ে আসছে। এ সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী ওই আদালতে ৫৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যাসোসিয়েটেড প্রসিকিউটোরিয়ার রিফর্মস ইনিশিয়েটিভ (ক্যাপরি) প্রকল্পের একটি লক্ষ্য হলো, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিধিগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তদন্ত, আটক ও বিচার করতে পাকিস্তানের বেসামরিক সক্ষমতা বাড়ানো।’

তবে আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা রিপ্রিভ বলছে, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদবিরোধী বেসামরিক আদালতকে সহায়তা করাটা যুক্তরাজ্যের জন্য অসম্ভব। কারণ এ আদালতগুলো যথাযথ মানদণ্ড অনুসরণ করে না।

রিপ্রিভ-এর দাবি, অপহরণের মতো অপরাধের সাজা হিসেবেও পাকিস্তানের এ আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, হত্যা বাদে অন্য কোনও অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় সন্ত্রাসবাদকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সমাজে ভীতি ও অনিরাপত্তা তৈরি করতে যেকোনও ধরনের অপরাধ সংঘটন ও হুমকি-ধামকিকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতা না থাকা ব্যক্তিরাও এ আইনের আওতায় পড়ে যায়। গত বছর জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিটি বলেছিল, ‘সন্ত্রাসবাদের অত্যন্ত বিস্তৃত সংজ্ঞা’ এবং ‘পদ্ধতিগত সুরক্ষার অনুপস্থিতি’তে তারা উদ্বিগ্ন। সমালোচকরাও অভিযোগ করে আসছেন, পাকিস্তানের বেসামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পদ্ধতিগত সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় না।

পাকিস্তানে যুক্তরাজ্যের পরিচালিত আইনের শাসন কর্মসূচি হলো, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দফতর, পররাষ্ট্র দফতর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় অপরাধবিষয়ক সংস্থা, হোম অফিস ও ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের একটি যোথ প্রকল্প।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, তারা পাকিস্তানকে এমনভাবে সহায়তা করছেন যেন তা মৃত্যুদণ্ড প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। ওই মুখপাত্র বলেন, ‘পাকিস্তানে আমাদের কর্মসূচি সেখানকার অপরাধের বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে সহায়তার জন্য পরিচালিত হচ্ছে। আমরা নিশ্চিত, আমাদের মৃত্যুদণ্ডবিরোধী অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’