সমাহিত হলো মার্কিন হেফাজতে প্রাণ হারানো জ্যাকলিন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অমানবিক অভিবাসন নীতির বলি হওয়া প্রথম গুয়াতেমালান শিশুটিকে তার নিজ দেশে সমাহিত করা হয়েছে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নিউ মেক্সিকোতে মার্কিন সীমান্ত রক্ষা বাহিনী জ্যাকলিন ও তার বাবাকে আটক করে। মার্কিন সরকারের হেফাজতে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় জ্যাকলিন মারা যায়। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর তাকে সমাহিত করা হলো। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) জ্যাকলিনকে সমাহিত করা হয়
মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (সিবিপি) দাবি করছে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অভিযোগে জ্যাকলিনের বাবাকে ৬ ডিসেম্বর আটক করা হয়। ওই সময় সঙ্গে থাকা জ্যাকলিনের পরীক্ষা–নিরীক্ষায় কোনও শারীরিক সমস্যা পাওয়া যায়নি। তাকে যেখানে আটক রাখা হয়, সেখানে খাবার, পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল। সেখান থেকে ১৫১ কিলোমিটার দূরত্বে সীমান্ত স্টেশনে নেওয়ার জন্য বাবার সঙ্গে তাকে বাসে তোলা হয়। বাসে জ্যাকলিনের বাবা নিরাপত্তাকর্মীদের জানান, মেয়ে বমি করছে, শ্বাস নিচ্ছে না। এর প্রায় দেড় ঘন্টা পর স্টেশনে পৌঁছে তাকে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে জ্যাকলিনকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হলেও তাতে কাজ হয়নি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সে। তার লিভার অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।

এ সপ্তাহে জ্যাকলিনের মৃতদেহ গুয়াতেমালায় পাঠানো হয়। মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় তার শেষকৃত্য। জ্যাকলিনের বাবা নেরি এখনও যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাকে সেখানে থাকতে দেওয়া হবে নাকি বিতাড়িত করা হবে সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

আদিবাসী শিশু জ্যাকেলিন গুয়াতেমালার স্যান অ্যান্টোনিও সেকোর্তেজ এলাকার একটি গ্রামের বাসিন্দা ছিল। প্রতিবেশীরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জীবন নিয়ে খুব স্বপ্ন দেখছিল জ্যাকেলিন। সবার কাছে তা নিয়ে গল্প করতে। ম্যাটিন টুট নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘ও এ ভ্রমণ নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত ছিল। সুযোগ পেলেই এ নিয়ে গল্প করতো।’

এদিকে মার্কিন হেফাজতে থাকা অবস্থায় সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) মধ্যরাতেও আরেক গুয়াতেমালান শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আট বছর বয়সী এ শিশুর নাম ফেলিপ গোমেজ।

উল্লেখ্য, বিগত কয়েক মাসে অভিবাসনের প্রত্যাশায় গুয়াতেমালা,হন্ডুরাস ও এল সালভাদর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে ভীড় জমিয়েছে লাখো মানুষ। নিজ দেশে নিপীড়ন,দারিদ্র্য ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছে তারা। তবে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের গ্রেফতার,বিচার ও বিতাড়নের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রবর্তক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্ত রক্ষা কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। রেহায় মিলছে না শিশুদেরও। মামলা নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত প্রত্যেককে সীমান্তে আটক রাখার ব্যাপারে অনড় ট্রাম্প। আর সেকারণে মেক্সিকোর সীমান্তবর্তী শহর মেক্সিকালি ও তিজুয়ানায় অস্থায়ী শিবিরে ভীড় জমেছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের। আটক হওয়া অভিবাসী শিশুদেরকে মার্কিন সরকারের আটককেন্দ্রে হেফাজতে রাখা হয়েছে।