অশুভকে বিদায় জানালো বিশ্ব, স্বাগত জানানো হলো ২০১৯ সালকে

অশুভ আর মনুষ্যত্ববিরোধী প্রথাকে পেছনে রেখে শুভ আর মঙ্গলের প্রার্থনায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাল বিশ্ব। আতশবাজি, কনসার্ট, আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক বক্তব্যসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে খ্রিস্টীয় নববর্ষকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববাসী। বিদায় জানিয়েছে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে নানান ধারার সংঘাত-সংঘর্ষে চ্যালেঞ্জে ভরপুর ২০১৮ সালকে বিদায়ও জানানো হলো।

নববর্ষ উদযাপন
বিভিন্ন দেশের উদযাপনের চিত্র:

নিউ ইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র

নিউ ইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারে জড়ো হয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরাও ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। ঐতিহ্যগতভাবে ক্রিস্টাল বল ফেলে নববর্ষের প্রথম প্রহরটিকে উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে ছিল কড়া নিরাপত্তা। অংশগ্রহণকারীদের কারও কাছে অস্ত্র ছিল কিনা তা তল্লাশি করে তারপর তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। ভীড়ের ওপর নজর রাখতে ড্রোন ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করতে বাধ্য হয় পুলিশ। নিরাপত্তাজনিত কারণের কথা বলে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ছাতা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল কর্তৃপক্ষ। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে অনেকে তাই প্লাস্টিক ব্যবহার করেছে।

রিও ডি জেনিরো, ব্রাজিল

রিও ডি জেনিরোর কোপাকাবানা সমুদ্র সৈকতে নববর্ষ উদযাপন করেছে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। ১৪ মিনিট ধরে আতশবাজির ঝলকানিতে ২০১৯ সালকে স্বাগত জানায় তারা। মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ জাইর বলসোনারো।

লন্ডন, যুক্তরাজ্য

বরাবরের মতোই বিগ বেন ঘড়িতে রাত ১২ টা ১ মিনিটের বেল বাজার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে ব্রিটিশরা। বিশ্ববিখ্যাত এ ঘড়িটি একটি সংস্কার প্রকল্পের আওতায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে নববর্ষ উদযাপনের জন্য সম্প্রতি বিশেষ পদ্ধতিতে ঘড়িটি সচল করা হয়। যুক্তরাজ্যে বিগ বেন ঘড়ির বেল ছাড়া নববর্ষকে স্বাগত জানানোর কথা ভাবাই যায় না। যুক্তরাজ্যের টিভি ও রেডিও স্টেশনগুলোও পুরনো বছর থেকে নতুন বছরে পদার্পণের ক্ষণটিকে বোঝাতে বিগ বেনের বেলের শব্দকেই ব্যবহার করে থাকে।

প্যারিস, ফ্রান্স

পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চ্যাম্পস-এলিসিস এলাকায় জড়ো হয় ফরাসি নাগরিক ও পর্যটকরা। সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়। সরকারবিরোধী ইয়েলো ভেস্টস আন্দোলনকারীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। উদযাপনের এলাকায় অ্যালকোহল গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা ও যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করে প্যারিস পুলিশ। রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘উচ্চ সন্ত্রাসবাদী হুমকি’ ও ‘অঘোষিত বিক্ষোভ’জনিত উদ্বেগকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করতে হয়েছে। উল্লেখ্য, উচ্চ কর ও ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার কারণে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে রয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

নববর্ষ উদযাপন-২
বার্লিন, জার্মানি

বার্লিনের ব্রান্দেনবার্গ গেট এলাকায় জড়ো হয়ে ২০১৯ সালকে স্বাগত জানিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ছিল কড়া নিরাপত্তা। জার্মানির রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে মোতায়েন করা হয় প্রায় ১৩০০ নিরাপত্তা কর্মকর্তা। বেষ্টনীতে ঘেরাও থাকা অনুষ্ঠানস্থলে আতশবাজি, বোতল ও বড় ব্যাগ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল।

ভ্যাটিকান সিটি

ভ্যাটিকান পোপ হিসেবে দায়িত্বরত অবস্থায় ২০১৮ সাল‌ ছিল ফ্রান্সিসের জন্য সবচেয়ে সংকটপূর্ণ বছর। এ বছরটিতে ধর্মযাজকদের একের পর যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে এসেছে। সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে প্রার্থনার আয়োজন করেন পোপ ফ্রান্সিস। ধর্মীয় বাণীতে পোপ ২০১৮ সালে দুর্দশায় থাকা মানুষদের কথা স্মরণ করেন। বাস্তুচ্যুত অবস্থায় ও আধুনিক দাসত্বের মধ্যে থাকা মানুষের কষ্টের কথা বর্ণনা করেন তিনি। মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) পোপ নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে একটি সমাবেশে অংশ নেবেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত বিশ্বের দীর্ঘতম ভবন বুর্জ খলিফায় আতশবাজির ঝলকানিতে নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। লাখো দর্শক সেখানে ভীড় জমান। বুর্জ খলিফার আশেপাশের ক্যাফে ও রেস্তোরাঁগুলোকে বিশেষ খাবারের আয়োজন ছিল। দেওয়া হয়েছিল নানা ছাড় ও বিশেষ অফার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমাহতে ৭.৩৫ মাইল জায়গাজুড়ে আতশবাজির ঝলকানি প্রদর্শিত হয়। এটি দীর্ঘতম আতশবাজির আয়োজন হিসেবে গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

থাইল্যান্ড

অন্যান্য দেশের মতো থাইল্যান্ডেও আতশবাজির ঝলকানিতে নববর্ষকে বরণ করে নেওয়া হয়। পাশাপাশি সেখানকার অনেক মানুষ এদিন তাকিয়েন মন্দিরে ভীড় জমান। ব্যাংককে অবস্থিত এ মন্দিরের ভেতরে থাকা কফিনে শুয়ে ঐতিহ্যবাহী ‘শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে’ যোগ দেন তারা। অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বাস করে, এ প্রথা মৃত্যু আর পুনর্জন্মের প্রতীক। এর মধ্য দিয়ে তারা দুর্ভাগ্য থেকে দূরে থাকতে পারবে এবং নতুন বছরে নতুন করে কাজ শুরুর জন্য তারা পুনর্জন্ম নিচ্ছে।

থাইল্যান্ডে কফিনে শুয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়
ফিলিপাইন

ফিলিপাইনে নববর্ষ উদযাপনে পটকা বিস্ফোরণের সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ১০ দিনে পটকাবাজির ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহত হওয়ার কথা জেনেছে তারা।  তাছাড়া সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে কোতাবাতোতে অবস্থিত একটি শপিং মলের প্রবেশপথের কাছে বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ২ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়।

চীন

চীনের মূল ভূখণ্ডে ইংরেজি নববর্ষ খুব একটা উদযাপিত হয় না। সেখানে ফেব্রুয়ারিতে লুনার নববর্ষকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। চীন, কোরিয়া, জাপানসহ গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পালন হয়ে থাকে লুনার নববর্ষ। তবে এরপরও সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে চীনের বেশ কয়েকটি বড় শহরে পুরনো বছরকে বিদায় ও নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়েছে। অনেকে বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করেছেন। নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে সাংহাইতে এদিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ২০১৪ সালে সাংহাইতে নববর্ষ উদযাপনের সময় পদপিষ্ট হয়ে নিহত হয় ৩৬ জন।

কিরিবাতি

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ হিসেবে নববর্ষকে প্রথম স্বাগত জানিয়েছে কিরিবাতি। তবে উদযাপন চলেছে খুব নীরবে। দেশটির রাজধানী তারাওয়ার বিভিন্ন গির্জায় প্রার্থনা ও পারিবারিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া

নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবারে ভীড় জমায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ। বিভিন্ন শহরে আয়োজন করা হয় বর্ণিল আতশবাজি উৎসবের। 

দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য ২০১৮ সালটি ছিল খুব উল্লেখযোগ্য বছর। এ বছর উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি ইস্যুতে তিনটি আন্তঃকোরীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রচেষ্টা যেন স্থিতিশীল শান্তিতে পরিণত হয় সে আশা নিয়ে ২০১৯ সালে পদার্পণ করেছে দক্ষিণ কোরীয়রা।