প্রথমবারের মতো চাঁদের উল্টো পিঠে চীনা মহাকাশযান

মানুষের প্রথম পদচিহ্ন পড়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মহাকাশযানগুলো পৃথিবী অভিমুখে থাকা চাঁদের পৃষ্ঠেই অবতরণ করেছে। এতদিন অনাবিষ্কৃত ছিল পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটির উল্টো দিকের পৃষ্ঠদেশ। এবার সেই পৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরুর আইটকেন অববাহিকায় মানুষবিহীন মহাকাশযান পাঠানোর দাবি করেছে চীন। বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বেইজিংয়ের সময় সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮:২৬)  তাদের চ্যাং ই-ফোর মহাকাশযানটি সফলভাবে অবতরণ করেছে। যানটিতে ওই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক চরিত্র নিরূপণের সরঞ্জাম ছাড়াও জীববৈজ্ঞানিক পরীক্ষার যন্ত্রপাতি রয়েছে। এই অবতরণকে ‘মহাকাশ অভিযানের বড় একটি মাইলফলক’ আখ্যা দিয়েছে চীন।p06x2k4t

‘টাইডাল লকিংয়ের’ কারণে পৃথিবী থেকে শুধুমাত্র চাঁদের একপিঠ দেখা যায়। অর্থাৎ, নিজের অক্ষে ঘুরতে চাঁদ যত সময় নেয় সেই একই সময়ে পৃথিবীর কক্ষপথে পুরো একবার ঘুরে আসে উপগ্রহটি। ফলে আমরা সবসময় চাঁদের এক পাশ দেখতে পাই পৃথিবী থেকে । চাঁদের উল্টোপিঠকে প্রায়ই ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন পিঠ’ বলা হয়। তবে চাঁদের দুই পিঠেই দিন-রাত হয়। ফলে উল্টোপিঠকে ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন পিঠ’ না বলে ‘অদেখা পিঠ’ বলাটাই যথোপযুক্ত।

ওই পিঠে অবতরণ করতে চ্যাং ই-ফোর মহাকাশযানটি বিগত কয়েকদিনে নিজের  কক্ষপথ কমিয়ে এনে চাঁদে অবতরণের প্রস্তুতি নেয়। সপ্তাহের শেষ দিকে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, মহাকাশযানটি চাঁদের চারদিকে একটি উপবৃত্তাকার পথে প্রবেশ করেছে। এটি চাঁদের পৃষ্ঠদেশের নিকটতম বিন্দুর ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকে পড়ে। চীনের দাবি, উল্টোপিঠ লক্ষ্য করে নামতে চাওয়ায় অভিযানটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও পূর্ববর্তী অভিযানগুলোর চেয়ে জটিল। বৃহস্পতিবার অবতরণ করা যানের  মাধ্যমে চাঁদের পাথর ও ধূলিকণা পৃথিবীতে আনতে পারবে চীন।

চাঁদের উল্টোপিঠে চীনা মহাকাশযানের অবতরণকে দুঃসাহসিক অভিযান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু কোয়েটস। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক সর্ববৃহৎ মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউসিএল মুলারড স্পেস সাইন্স ল্যাবরেটরির এই অধ্যাপক মহাকাশযানটির অবতরণের আগে বিবিসিকে বলেছিলেন, ঐতিহাসিক অ্যাপোলো (চাঁদে মানুষ নিয়ে যাওয়া মহাকাশ যান) অভিযানের প্রায় ৫০ বছর পর এই দুঃসাহসিক অভিযানটি হতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের শেষদিকে নমুনা নিয়ে ফিরতি অভিযান পরিচালনা করবে চীন।

চাঁদের উল্টোপিঠ অপেক্ষাকৃত সরু। এর পুরনো বহিরাবরণটিতে থাকা গর্তের পরিমাণও বেশি। অঞ্চলটিতে অল্প পরিমাণে লাভা স্রোতে সৃষ্ট অন্ধকারাচ্ছন্ন শিলা রয়েছে। চাঁদের সম্মুখভাগেও এসব শিলা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। চ্যাং ই-ফোর অভিযানের লক্ষ্য ‘ভন কারমান’ নামের গর্ত। ধারণা করা হয়ে থাকে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর আইটকেন অববাহিকায় অবস্থিত এই জ্বালামুখটি চাঁদ সৃষ্টির প্রথমদিকে একটি বড় ধরণের সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছিল।

প্রফেসর কোয়েটস জানান, বিশাল এই গহ্বরটির ব্যাস ২৫০০ কিলোমিটারের বেশি। এর গভীরতা ১৩ কিলোমিটার। সংঘর্ষের কারণে তৈরি হওয়া যতগুলো বড় গর্ত দেখা গেছে তাদের মধ্যে অন্যতম বড় এটি। এছাড়া এটি চাঁদের সবচেয়ে বড়, গভীর এবং পুরানো অববাহিকাও। চীনের এই অভিযানের মাধ্যমে পাওয়া নমুনা  চাঁদের গঠন বুঝতে খুবই মূল্যবান ভূমিকা রাখবে।