হাঙ্গেরির শ্রম আইনে দাসপ্রথার ছাপ, বিক্ষোভ মোড় নিচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে

হাঙ্গেরিতে বছরে অতিরিক্ত ৪০০ কর্মঘণ্টা শ্রমের বিধান রেখে সম্প্রতি পাস হওয়া শ্রম আইনের বিরুদ্ধে সে দেশের রাস্তায় নেমেছে মানুষের ঢল। একে দাসত্বমূলক আইন আখ্যা দিয়ে রাজধানী বুদাপেস্টের রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছে কয়েক হাজার মানুষ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে, প্রণীত শ্রম আইনের বিরুদ্ধের ওই বিক্ষোভ মোড় নিয়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে। দেশের আদালত ও রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসা ডানপন্থী ফিদেসজ পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত করার স্লোগান তুলেছে বিক্ষুব্ধ দেশবাসী।

`দাস আইন` এর বিরুদ্ধে বুদাপেস্টে বিক্ষোভ
হাঙ্গেরিতে নতুন শ্রম আইন প্রণীত হওয়ার আগে একজন মালিক বছরে শ্রমিকদের সর্বোচ্চ ২৫০ ঘণ্টা ওভারটাইম করাতে পারতেন। তবে নতুন আইনে ৪০০ ঘণ্টা ওভারটাইমের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। শনিবার জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা নতুন আইন বাতিলের দাবি তোলেন। তুষারপাতের মধ্যেই রাজপথে অবস্থান নিয়ে ‘দাস আইনের’ বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের জানান দেন তারা। রাজধানী বুদাপেস্টের ঐতিহাসিক হিরোস স্কয়ার থেকে ড্যানুবে নদী তীরের পার্লামেন্ট ভবন এলাকা পর্যন্ত বিক্ষোভ নিয়ে অগ্রসর হন তারা।

হাঙ্গেরিতে গত বছর বিপুল সমর্থন নিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে ভিক্টর  ফিদেসজ পার্টি। পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ আসন দখল করে তারা। ক্ষমতায় আসার পর স্বাধীনভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোকেও জোরপূর্বক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় অরবানের নেতৃত্বাধীন সরকার। সেই সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী অরবানের প্রস্তাবিত নতুন এই আইন উত্থাপিত ও অনুমোদিত হয়। সরকারের দাবি, শ্রমিকদের স্বার্থেই কর্মঘণ্টায় এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে করে মানুষ বেশি কাজ ও বেশি আয় করতে পারবে।

সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আইনের স্বপক্ষে কর্মী সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সরকারি হিসাবে, হাঙ্গেরিতে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে  দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভকারীরা এবার সরকারের বিরুদ্ধেই স্লোগান তুলেছে। ব্যানারের  স্লোগানে ‘সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত’ করার ডাক দেওয়া হয়েছে। এসেছে ‘জাতীয় ধর্মঘটের’ ডাকও। কেউ কেউ দেশের আদালতকে ডানপন্থী সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার আখ্যা দিয়ে এর প্রতি অনাস্থা জানাচ্ছেন। কেউ আবার মিডিয়ার ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার সরকারি পক্ষপাতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

৫০ বছর বয়সী এভা দেমেতের ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতি থেকে শুরু করে ছদ্মবেশী-গণতন্ত্র পর্যন্ত যা চলছে তার প্রায় সবকিছুর ব্যাপারেই আমাদের অমত রয়েছে।’ তার দাবি, অনেক মানুষের ওপর ‘দাস আইন’র প্রভাব পড়ার কারণে হাঙ্গেরীয়রা রাস্তায় নেমেছে।

ডিসেম্বরে হাঙ্গেরির পার্লামেন্টে আইনটি পাস হওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে নিজেদের ক্ষোভের জানান দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। ডিসেম্বরে দাস আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল এমটিভিএ’র সদর দফতরের সামনে পৌঁছে যায়। এক পর্যায়ে তারা ভবনটিতে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।

বুদাপেস্ট থেকে আল জাজিরা’র মিরনা ব্রেকালো জানান, আন্দোলনকারীদের দাবির পরিমাণ আরও বেড়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের অপসারণ চায়।