কুর্দি বিদ্রোহীদের নিয়ে মারাত্মক ভুল করছে যুক্তরাষ্ট্র: এরদোয়ান

সিরিয়ার কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ওয়াইপিজি’র সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতার কঠোর সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের (ওয়াইপিজি) ভালোভাবে চেনেও না। এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আমার কুর্দি ভাইদের প্রতিনিধিত্ব করে না। আমেরিকা যদি মনে করে থাকে যে, এই দলগুলো আমার কুর্দি ভাইদের প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে তারা মারাত্মক ভুল করছে।’ মঙ্গলবার তুর্কি ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতাদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানএর আগে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বিদ্রোহীদের সুরক্ষায় তুরস্কের কাছে নিশ্চয়তা চায় ওয়াশিংটন। এমন পূর্বশর্তে ক্ষুব্ধ হয় আঙ্কারা।

ইসরায়েল সফররত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, সিরিয়া ছাড়ার আগে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ওয়াশিংটন। তার এ মন্তব্যের সমালোচনা করে এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েল থেকে জন বোল্টন যে বার্তা দিয়েছেন তা আমরা গ্রহণ করতে পারি না। এসব বলে তুরস্কের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করা যাবে না।

এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এরদোয়ান। তবে সতর্কতার সঙ্গে এবং সঠিক সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন তিনি। কলামে সিরিয়া থেকে আইএস-সহ অন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে পরাজিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এরদোয়ান।

তিনি বলেন, সিরিয়া থেকে সেনা প্রতাহ্যারের ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত একটি সঠিক পদক্ষেপ। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সিরিয়ার জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সতর্কতার সঙ্গে এবং সঠিক অংশীদারদের সহযোগিতা নিয়ে এটি কার্যকর করতে হবে।

এরদোয়ান বলেন, ন্যাটোতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা পাঠানো তুরস্ক হচ্ছে একমাত্র দেশ যাদের সেই এই কাজ সম্পাদনের শক্তি এবং অঙ্গীকার রয়েছে।

২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর সিরিয়া থেকে মার্কিন বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটার পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমরা সিরিয়ায় আইএস-কে পরাজিত করেছি। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে শুধু আইএস-কে হটানোর জন্যই তাদের সেখানে (সিরিয়া) রাখা হয়েছিল।’ তবে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা প্রবল। এ ইস্যুতে সবচেয়ে আলোচিত নাম পদত্যাগী প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস। আফগানিস্তান ও সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের মতো কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতার সূত্রে তিনি পদত্যাগ করেন। ট্রাম্প তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের হাতে সিরিয়ায় থাকা ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের নির্মূল করার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা হয়ে দেখা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কুর্দিরা। অন্যদিকে সিরিয়ার কুর্দি বিদ্রোহীদের তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সিরীয় শাখা হিসেবে বিবেচনা করে আঙ্কারা। কুর্দি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পিকেকে তুরস্ক, ইরান, ইরাক ও সিরিয়ার অংশবিশেষ নিয়ে কুর্দিস্তান নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে কুর্দিরা রুশ সমর্থিত সিরিয়ার আসাদ বাহিনীর ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে। বিপরীতে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। একদিকে সিরীয় বাহিনী কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকা মানবিজে উপস্থিত হয়েছে। অন্যদিকে এরদোয়ান বলেছেন, কুর্দিদের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে রাশিয়ায় তিনি অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন। শিগগিরই কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের আদেশ দিতে পারেন তিনি। এ প্রেক্ষাপটে গত বুধবার (০২ জানুয়ারি) ট্রাম্প বলেছেন, সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হবে ঠিকই, তবে তা হবে পর্যায়ক্রমে। তিনি সিরিয়ায় থাকা মার্কিন মিত্র কুর্দি যোদ্ধাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চান। সূত্র: আল জাজিরা, দ্য ইন্টারসেপ্ট।