মে'র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের হুঁশিয়ারি করবিনের, মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি

ব্রেক্সিট নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন। বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ব্রেক্সিট নামে পরিচিত। ২৯ মার্চ এই বিচ্ছেদ কার্যকরের দিনক্ষণ নির্ধারিত আছে। তবে এখনও যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরে এ নিয়ে সমঝোতা হয়নি। চুক্তি পাসে ব্যর্থ হলে মে'র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন লেবার নেতা করবিন। 
থেরেসা মে (বামে) ও জেরেমি করবিন (ডানে)

দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাসের আলোচনার পর গত বছরের নভেম্বরে ইইউর সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী মে। বিরোধী লবার পার্টির পার্টির পাশাপাশি সরকার দলীয় কনজারভেটিভদের একাংশও  এই চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার চুক্তিটি অনুমোদন প্রশ্নে সংসদে ভোটাভুটি  অনুষ্ঠিত হবে।

করবিন বলছেন, মঙ্গলবার সরকার চুক্তি পাসে ব্যর্থ হলে তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে আস্থা ভোটের প্রস্তাব আনবেন। করবিন বলেন, আস্থা ভোটে লেবার দল এককভাবে কিছু করতে পারবে না। তাই ব্রেক্সিট অচলাবস্থা নিরসনে সব দলের এমপিদের উচিত হবে লেবারের আনা অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করা।প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের উদ্দেশে জেরেমি করবিন বলেন, ‘সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে আপনি যদি এতই আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকেন, তবে সাধারণ নির্বাচন দিন। এতে চুক্তির বিষয়ে জনগণ মতামত জানাবে।’ নতুন সরকার ব্রেক্সিট বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত চুক্তি সম্পাদনে পুনরায় উদ্যোগ নেওয়ার অধিকার পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গত মঙ্গলবার ও বুধবার অনুষ্ঠিত ব্রেক্সিট–বিষয়ক দুটি ভোটাভুটিতে হেরেছে থেরেসা মের সরকার। একটিতে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট কার্যকর নিরুৎসাহিত করতে সরকারের আর্থিক ক্ষমতা সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। অপরটিতে সম্পাদিত চুক্তি সংসদে পাস না হলে তিন দিনের মধ্যে নতুন প্রস্তাব উত্থাপনে সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ব্রেক্সিট–বিরোধী সর্বদলীয় এমপিদের একটি জোট এসব প্রস্তাব আনছে। তারা সম্পাদিত চুক্তির বিপক্ষে। আবার চুক্তিটি পাস না হলে সরকার যাতে বিনা চুক্তিতে ব্রেক্সিট না ঘটায়, সেটিও নিশ্চিত করতে চাইছে তাঁরা। এই জোটের এমপিরা পুনরায় গণভোট আয়োজনের দিকেই সরকারকে নিয়ে যেতে চাইছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটপন্থী লেবার এমপিরা ইইউ নির্ধারিত পরিবেশ সুরক্ষা নীতি এবং বিদ্যমান শ্রমিক অধিকার রক্ষার বিনিময়ে সরকারের চুক্তিতে সমর্থন দিতে সমঝোতা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ব্রেক্সিট–বিরোধী লেবার এমপিরা ব্রেক্সিট প্রশ্নে পুনরায় গণভোট চাইছেন। তবে করবিনের অবস্থান মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে। তিনি বলছেন, চুক্তি পাসে ব্যর্থ হলে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন। এতে কাজ না হলে এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি ব্যর্থ হলে তিনি পুনরায় গণভোট আয়োজনের দাবিসহ অন্য বিকল্পের পথে হাঁটবেন।

করবিনের মতে, ব্রেক্সিট সমাজে যে বিভাজনের সৃষ্টি করেছে, তা থেকে মুক্ত হতে দরকার জনগণের পছন্দের নতুন সরকার। আর্থিক বৈষম্যকে সমাজে বিভক্তির আসল কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তার মতে, প্রভাবশালী ও ধনীদের প্রতি নমনীয় সরকারি নীতি এমন বৈষম্যের জন্য দায়ী। ক্ষমতায় গেলে ইইউ শুল্ক জোটের (কাস্টমস ইউনিয়ন) সদস্যপদ ধরে রাখার পাশাপাশি সেখানকার একক বাজারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে ব্রেক্সিট কার্যকরের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি।