বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে: ফিলিপাইন

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের (আরসিবিসি) সাবেক ব্যবস্থাপকের কারাদণ্ড হলেও মামলার আরও ছয় আসামির বিষয়ে তদন্ত এখনও হয়নি। রবিবার দেশটির বিচার বিভাগ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, আরসিবিসির ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ফিলিপাইন স্টার এখবর জানিয়েছে। ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত অভিযুক্ত ছয়জনের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়ার একদিন পরে একথা জানালো দেশটি।

 

২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাকড করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ চুরি করা হয়। হ্যাকাররা ওই অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ৪টি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। সেখান থেকে ওই অর্থ ফিলিপিনো পেসোতে রূপান্তরের পর দুটি ক্যাসিনোতে পাঠানো চলে যায়। এ ঘটনায় দায়ী করে গত ১০ জানুয়ারি আরসিবিসি’র সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসহ অর্থ পাচারের আট দফা অভিযোগে তাকে দণ্ড দেওয়া হয়। তবে এ রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেগুইতো ছাড়াও আরসিবিসির আরও ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

তিন বছরের মাথায় দেগুইতোর বিরুদ্ধে রায় পাওয়া গেলেও অপর কর্মকর্তাদের বিচার কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম জানান, আরসিবিসি’র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের অর্থপাচারবিরোধী পরিষদের দায়েরকৃত (এএমএলসি) অভিযোগ খতিয়ে দেখার দায়িত্বে রয়েছে  ডিওজে। তারা এ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করবে বলে তিনি আশাবাদী।

রবিবার ফিলিপাইনের প্রসিকিউটর জেনারেল রিচার্ড অ্যান্থনি ফাদুলোন বলেন, সাবেক আরসিবিসি কোষাধ্যক্ষ রাউল ভিক্টর তান, খুচরা ব্যাংকিং সংক্রান্ত জাতীয় বিপনন পরিচালক ইসমাইল রেয়েস, খুচরা ব্যাংকিং সংক্রান্ত আঞ্চলিক ব্রিজিত্তে কাপিনা, সরাসরি বিপনন পরিচালক নেস্তর পিনেদা, জুপিটার বিজনেস সেন্টারের কাস্টমার সার্ভিস প্রধান রোমুয়াল্দো আগারাদো ও জুপিটার বিজনেস সেন্টারের সিনিয়র কাস্টমার রিলেশন্স অফিসার অ্যাঙ্গেলা রুথ টরেসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। প্রাথমিক তদন্ত শেষে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়নি।

তবে ফাদুলোন বলতে পারেননি ২০১৬ সালের নভেম্বরে গঠিত অভিযোগের রেজ্যুলেশন কবে প্রকাশ হবে। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটরদের সঙ্গে কথা বলে তিনি বিষয়টি জানাতে পারবেন।  বলেছেন, ‘আমরা খতিয়ে দেখবো যে মামলাটি কী অবস্থায় আছে। এরপরই সেটা প্রকাশ হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলা যাবে।

ফিলিপাইন স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগে মামলা ঝুলে থাকায় আদালতে চলমান আরেকটি মামলায় ওই ছয় কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হতে পারে।

রাউল ভিক্টর তান দেশটির সাবেক জাতীয় কোষাধ্যক্ষের ভাই এবং বর্তমানে দেশডির ডিপোজিট বীমা কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর ‘সৌজন্যবোধ ও সম্মানের কথা চিন্তা করে’ ২০১৬ সালের এপ্রিলে পদত্যাগ করেছেন তান। অর্থ পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর টরেসকে আরসিবিসি কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করেছে বলে জানা গেছে।

অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল জানিয়েছে, তানের পক্ষে কাউন্সিলকে বিষয়টি সম্পর্কে আগে অবহিত করার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারপরও তিনি দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন।   

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম ফিলিপাইনের বিচার বিভাগকে এই মামলার সমাধানের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতেও মামলা করার পরিকল্পনা রয়েছে।