ট্রাম্পবিরোধী ‘নারী মিছিল’র টার্গেট ২০২০ সালের নির্বাচন

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার একদিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজপথ সরব হয়েছিল নারীদের প্রতিবাদী মিছিলে। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত দুই লাখ নারীর সেই মিছিল থেকে ট্রাম্পকে দেওয়া হয়েছিল প্রত্যাখ্যানের বার্তা। ঘটনার তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে আবারও নারীর কণ্ঠস্বরে সরব সে দেশের রাজপথ। ২০১৮ সালেও একইভাবে নেমেছিলেন নারীরা। বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জিত হয়েছিল নারীদের। সেই সাফল্য উদযাপন এবারের মিছিলের অন্যতম লক্ষ্য। তবে সবথেকে বড় টার্গেট ২০২০ সালের নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করতে চায় নারীরা। প্রভাবিত করতে চায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নীতিগত সিদ্ধান্তকে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে নারীদের বিক্ষোভ
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পরদিনই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের রাজপথ দখলে নেয় নারীরা। অভূতপূর্ব সেই ‘নারী পদযাত্রা’ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। পরের বছর ২০১৮ সালে ট্রাম্পবিরোধী স্লোগানে মুখরিত হয় ওয়াশিংটনসহ নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস ও ফিলাডেলফিয়ার রাজপথ। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তৃতীয়বারের আয়োজন। শনিবার (১৯ জানুয়ারি) নিউ ইয়র্ক, বোস্টন, ওয়াশিংটন, হাউস্টন, লস অ্যাঞ্জেলেস ও ডেনভারসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ হয়েছে।

সেই নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই ধারাবাহিক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, নারীবিদ্বেষী বিভিন্ন মন্তব্য এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ বিভিন্ন নারীর বিরুদ্ধে যৌন-নিপীড়নমূলক ভাষা ব্যবহারের নজির দেখা যায় ট্রাম্পের মধ্যে। সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অতীতের আর কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেলায় নারী-বৈরিতার এমন নজির দেখা যায়নি। সে কারণেই ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরই আশঙ্কা তৈরি হয়, তার শাসনামলে নারীবিদ্বেষ আরও বেশি করে অনুমোদিত সংস্কৃতিতে পরিণত হবে। নারীরা সেখান থেকেই তার বিরুদ্ধে নেমেছিলেন।

২০১৭ সালের শুরুর দিকে অন্তত ১০০টি সংগঠন নিয়ে গড়ে উঠেছিল মার্চ অন নামের নেটওয়ার্ক। মার্চ অনের নির্বাহী পরিচালক ভানেসা রুবল মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘২০২০ সালের নির্বাচনকালীন বিক্ষোভের সূচনাপর্ব হিসেবে এ বছরের বিক্ষোভ চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশকে পূর্ববর্তী অবস্থানে নিয়ে আসতে সংহতি ও প্রতিশ্রুতির প্রশ্নকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।’  শুরুর বছরে শুধু ‘পদযাত্রা’ করলেও ২ বছর পেরিয়ে এসে সংগঠকরা এখন নানা রাজনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত। বিভিন্ন প্রচারণায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেও কাজ করছে তারা। । এবার তাদের লক্ষ্য ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন।

অবশ্যই আমাদের লক্ষ্যবিন্দুর খুবই কেন্দ্রীয় অবস্থানে রয়েছে ২০২০ সালের নির্বাচন। বলেছেন, ২০১৭ সালে বস্টনে অনুষ্ঠিত নারী মিছিলের একজন সংগঠক। শনিবারের মিছিলের অন্যতম আয়োজক ‘মার্চ ফরওয়ার্ড ম্যাসাচুসেটস’ নামের সংগঠনের সঙ্গেও রয়েছেন তিনি।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়
কানেকটিকাট থেকে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সারাহ স্পোর্টম্যান। ৪০ বছর বয়সী এই প্রত্নতাত্ত্বিক বলছেন, ট্রাম্পের শাসনকে প্রতিহত করতেই তিনি এই মিছিলে সামিল হয়েছেন। তিনি এসেছেন পরিবেশ আর অভিবাসীর সুরক্ষার দাবিতে। ‘আমার মনে হচ্ছে দেশ যথাযথ পথে পরিচালিত হচ্ছে না, আমাদের ভালো কিছু করার আছে’।

তৃতীয়বারের মতো অংশ নিয়েছেন ৮৬ বছর বয়সী নিডিয়া লিফ। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার নীতিমালার বিরোধিতা চালিয়ে যাব। দেখুন না, তিনি সীমান্তে কী করছেন, শাটডাউনের কথাই ভাবুন না।...প্রতিবছরই নতুন নতুন নিষ্ঠুরতার চিত্র দেখা যাচ্ছে।’

২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় ভোটারদের কাছে যেতেও দেখা গেছে নারী মিছিলের সংগঠকদের। নির্বাচনে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল নারীরা। প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হিসেবে ১০২ জন নারী এবং সিনেটর হিসেবে ২৫ জন নারী শপথ নিয়েছিলেন। ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী নারী প্রতিনিধি হিসেবে এবার কংগ্রেসে আসেন নিউইয়র্কের আলেক্সান্দ্রিয়া ওচাসিও কর্টেজ।  মিশিগান ও মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত হন প্রথম দুই মুসলিম নারী প্রতিনিধি রশিদা তালিব ও ইলহান ওমর। দুই আদিবাসী নারী প্রতিনিধি হিসেবে পার্লামেন্টে আসেন নিউ মেক্সিকোর ডেব হালান্ড ও কানসাসের শারিস ডেভিডস।

ম্যানহাটনে নারীদের বিক্ষোভ
আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ নামের এক নবনির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য নিউ ইয়র্কের দুইটি সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন। সেন্ট্রাল পার্কের সমাবেশে তিনি বলেছেন, ‘গত বছর আমরা আমাদের ক্ষমতাকে নির্বাচন (মধ্যবর্তী নির্বাচন) পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলাম, আর এ বছর আমরা যেন সে ক্ষমতাকে নীতিমালায় পরিণত করতে পারি। আমরা কাউকে আমাকে অধিকার ছিনিয়ে নিতে দেব না।’

শনিবার উইমেন’স মার্চ নামে আলাদা আরেকটি গ্রুপ ওয়াশিংটনের রাস্তায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে। নিউ ইয়র্কে সকাল সোয়া ১১টার দিকে বিক্ষোভ করেছেন নারীদের একটি দল। উমেন’স মার্চ অ্যালায়েন্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ক্যাথেরিন সিয়েমিয়োনকো বলেন, নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভ আয়োজনের বড় একটি কারণ হলো নারী অধিকারের বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসা। নারী-পুরুষ বেতন সমতা থেকে শুরু করে মাতৃত্বকালীন ছুটির মতো নীতিমালাগুলোর ক্ষেত্রে সোচ্চার হওয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে সরব হতে হবে এবং লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা আত্মতুষ্ট হয়ে যেতে পারি না।’