স্বামী জেলে যাওয়ার পরে পুরুষতান্ত্রিক ঐতিহ্যের সমাজ ব্যবস্থায় নিজেকে বিচ্ছিন্ন আর একা হিসেবে আবিস্কার করেন কারাবন্দি রয়টার্স সাংবাদিক কিয়াও সোয়ের স্ত্রী চিত সু উইন। ঘরে থাকা ছোট্ট মেয়েকে সামলানোর পাশাপাশি স্বামীর জন্য আইনি লড়াই করতে হচ্ছে একাই। তবু ক্লান্ত নন এই নারী। চিত সু উইন মনে করেন, সত্যের পথে অবিচল তার স্বামী, কর্তব্য অনুযায়ী সঠিক কাজটিই করেছেন। কারাগারে যেন কিয়াও সোয়ের মনোবল ভেঙে না যায়, সে দিকে তীক্ষ্ণ নজর থাকে সু উইনের। স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, স্বামীকে সবসময় সাহস যোগানোর চেষ্টা করেন তিনি।
২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন আখ্যা পায় জাতিগত নিধন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে। ইন দিন গ্রামে সেপ্টেম্বরে সংঘটিত তেমনই এক গণহত্যার চিত্র তুলে ধরতে গিয়েই কারাভোগ করতে হচ্ছে রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিক কিয়াও সোয়ে আর ওয়া লোনকে। মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষ সেই বেআইনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে নিলেও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভঙ্গের দায়ে সাত বছরের দণ্ড নিয়ে কারাগারে দিন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন সাংবাদিক কিয়াও সোয়ে উ এবং ওয়া লোন।
পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে চিত সু উইন বলেন, ‘আমার ভয় হতো পরিবার বিচ্ছিন্নতায় সে (স্বামী) হয়তো বিষণ্ন হয়ে যাবে, কাতর হয়ে পড়বে বাড়ি ফিরতে না পারার কারণে। আমি তাকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করতাম। বিষণ্ন হতে দিতাম না।’ সু উইন বলেন, ‘সে আমাকে বলেছে কারাগারে সে শক্ত থাকার চেষ্টা করে কিন্তু পরিবার ছেড়ে থাকতে হওয়ায় সে বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে। সন্তানের আঁকাআঁকি, হাসি-কান্নাকে সে খুব মিস করছে।’
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের বিরুদ্ধে সাত বছর করে কারাদণ্ড ঘোষণা করে ইয়াঙ্গুনের একটি জেলা আদালত। ওই বছরের নভেম্বরের শুরুতে ইয়াঙ্গুনের হাইকোর্টে দুই সাংবাদিকের পক্ষে আপিল করেন তাদের আইনজীবীরা। গত ১১ জানুয়ারি আপিল খারিজ করে নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট। সবশেষ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে মিয়ানমারের সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন রয়টার্স সাংবাদিকরা। এখনও সেই আপিল নিষ্পত্তি হয়নি।