পাটনায় হামলার শিকার কাশ্মিরের ব্যবসায়ীরা

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় বিহার রাজ্যের পাটনা শহরে হামলার শিকার হয়েছে কাশ্মিরের অন্তত ৪০ ব্যবসায়ী। গত বৃহস্পতিবার কাশ্মিরের জঙ্গি হামলায় ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর ৪৪ সদস্য নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভরত ব্যক্তিরা শুক্রবার পাটনায় ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, অন্তত ৩০ জন বিক্ষোভকারী পাটনার কাশ্মিরি বাজার মার্গে ব্যবসায়ীদের ওপর লাঠি ও লোহার রড নিয়ে হামলা চালায়।  হামলার পর শনিবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা এসব ব্যবসায়ীরা পাটনা ত্যাগ করে কাশ্মিরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

noname

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পুলওয়ামাতে আরডিএক্স বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স’র গাড়ি বহরে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। এতে বহরের ৭০টি গাড়ির মধ্যে একটি বাস সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়ে যায়। প্রাণ হারায় বাহিনীর অন্তত ৪৪ সদস্য। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই মোহাম্মদ ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণা জোরালো করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেনাবাহিনীর জন্য সব ধরনের স্বাধীন পদক্ষেপের এখতিয়ার ঘোষণা করেন তিনি। যেমন করে কাশ্মিরকে সামরিকতায় আচ্ছন্ন বিচ্ছিন্ন প্রদেশের মতো করে রাখা হয়েছে, তেমন করেই ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে কাশ্মিরবিরোধী উত্তাপ। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার পাটনায় ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা হয়।  

শুক্রবারের হামলায় আহত হন কাশ্মিরের অন্তত ৪ ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে মিরাজ আহমেদ নামে একজনের অবস্থা গুরুতর। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত। হামলার পর ওই মার্কেটের নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ।

হামলার পর বশির আহমেদ ওয়ানি নামে এক ব্যবসায়ী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে শনিবার টেলিফোনে জানান তারা কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার বাসিন্দা। গত ৩৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার এধরণের ঘটনার মুখোমুখি হলেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, শুক্রবারের হামলার পর দোকানদাররা এখন ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। এখানে আর তারা ব্যবসা করতে চায় না। ওয়ানি জানান, কমপক্ষে ৩০টি মোটরসাইকেলে আসা তরুণেরা মার্কেটে ঢুকে পড়ে হামলা চালানো শুরু করে। হামলাকারীরা আমাদের মারধোর করে দ্রুত এই এলাকাত্যাগের নির্দেশ দেয়। হামলাকারীরা তাদের দোকান ভাংচুর করে বলেও জানান তিনি।

ওয়ানি বলেন, সাধারণত কাশ্মিরের ব্যবসায়ীরা মার্চ পর্যন্ত এখানে বাণিজ্য করে তবে এবার তারা তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পাটনার পুলিশ সুপার ডি অমরকেশ বলেছেন, শুক্রবারের ঘটনায় কোতয়ালী থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করের মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

হামলার পর জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ ঘটনার দায় স্বীকার করে দেওয়া বিবৃতিতে জানায়,তাদের হয়ে পুলওয়ামারই বাসিন্দা আদিল আহমেদ দার ওই হামলা চালিয়েছে।ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স আদিলের বাবা গুলাম হোসেনকে উদ্ধৃত করে জানায়, হিজবুল নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যু-পরবর্তী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে পাথর ছোড়ার অভিযোগে সেনাবাহিনীর হাতে মার খেয়েছিল আদিল আহমেদ দার। তারপরই সেনাবাহিনীর প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মায় তার। ‘ আজ  জওয়ানদের ঘরে যে যন্ত্রণা, আমার ঘরেও আমরা সেই একই যন্ত্রণা ভোগ করছি।’ বলেছেন আত্মঘাতী আদিলের বাবা গুলাম হোসেন দার। 

উল্লেখ্য, সুবিখ্যাত ভারতীয় লেখক ও মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায় কাশ্মিরকে কখনও ভারতের অংশ মনে করেন না। তার মতে, কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনী আগ্রাসন চালায়। ২০১৭ সালে তিনি শ্রীনগরে গিয়ে বলেন, ‘কাশ্মিরে সাত লাখ থেকে ৭০ লাখ সেনাবাহিনী মোতায়েন করলেও ভারতের উদ্দেশ্য সফল হবে না। কাশ্মিরের জনগণ বহু বছর ধরেই ভারতবিরোধী অনুভূতির মধ্যে রয়েছে।’ ২০১৩ সালে  কাশ্মিরের সেনা-সংখ্যা দুই লাখ কম ছিল। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে গার্ডিয়ানে অরুন্ধতী লিখেছিলেন, ‘আফজাল গুরুর ফাঁসি ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য কলঙ্ক’ শীর্ষক নিবন্ধে অরুন্ধতী তাই বলছেন, ‘আফজাল গুরুর সত্যিকার কাহিনী ও ট্র্যাজেডি শুধু আদালতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, প্রকৃত ঘটনা জানতে হলে কাশ্মির উপত্যকার ঘটনা জানতে হবে। এটি একটি পরমাণু যুদ্ধক্ষেত্র এবং পৃথিবীর সবচেয়ে সামরিকীকরণকৃত এলাকা। এখানে রয়েছে ভারতের পাঁচ লাখ সৈনিক। প্রতি চারজন বেসামরিক নাগরিকের বিপরীতে একজন সৈন্য! আবু গারিবের আদলে এখানকার আর্মি ক্যাম্প ও টর্চার কেন্দ্রগুলোই কাশ্মিরিদের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের বার্তাবাহক। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে সংগ্রামরত কাশ্মিরিদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজার মুক্তিকামীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ হাজারকে গুম করা হয়েছে। নির্যাতিত হয়েছে আরও অন্তত এক লাখ লোক।’