জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট ভারতকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, দেশটির ‘বিভাজন নীতি’ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে খর্ব করতে পারে। তিনি মনে করেন, আগে থেকে বিদ্যমান অসমতার সমাজে সংকীর্ণ রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলো অসহায় মানুষদেরকে আরও বেশি করে প্রান্তিকীকরণ করছে। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপিত বার্ষিক প্রতিবেদনে ব্যাচেলেট এসব পর্যবেক্ষণের কথা জানান। ভারতে মুসলিমসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে উল্লেখ করেও উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুধবার (৬ মার্চ) জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মিশেল ব্যাচেলেট। সেখানে বিশ্বে আয়, সম্পদ ও বিচারের সুযোগ প্রশ্নে ক্রমবর্ধমান অসমতাজনিত হুমকি নিয়ে সতর্ক করেছেন তিনি। এক পর্যায়ে আসে ভারতে সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের প্রসঙ্গ। ব্যাচেলেট বলেন, ‘আমরা যেসব খবর পাচ্ছি সে অনুযায়ী বোঝা যায়, সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলিম ও ঐতিহাসিকভাবে সুবিধা বঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের (যেমন দলিত ও আদিবাসী) ওপর হামলা ও হয়রানির প্রবণতা বাড়ছে।’
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় শাখার পক্ষ থেকে বিদ্বেষমূলক হামলার পরিসংখ্যান প্রকাশের একদিনের মাথায় এমন হুঁশিয়ারি দিলেন ব্যাচেলেট। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ভারতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন, ধর্ষণ ও হত্যাসহ ‘উদ্বেগজনক’ সংখ্যক বিদ্বেষমূলক অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
ইংরেজী ও হিন্দি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ২০১৮ সালে ভারতে ২১৮টি বিদ্বেষমূলক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪২টি হয়েছে নিম্ন বর্ণের দলিতদের ওপর। আর ৫০টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে।
অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক আকার প্যাটেল আল জাজিরার কাছে অভিযোগ করেন, ‘ভারতে বিদ্বেষমূলক হামলার জন্য দায়মুক্তির সংস্কৃতি বিরাজমান রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া দেশটির আইন বিদ্বেষমূলক হামলাকে সুনির্দিষ্ট হামলা হিসেবে স্বীকার করে না। এ ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানাতে আরও বেশি সরব হওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্যাটেল।