চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটকে ‘না’ বললো ব্রিটিশ পার্লামেন্ট

কোনও ধরনের চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসার প্রস্তাবটি (নো ডিল ব্রেক্সিট) প্রত্যাখ্যানের পক্ষে রায় দিলো ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। বুধবার (১৩ মার্চ) পার্লামেন্টে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছিল: ‘২৯ মার্চের পর সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে রূপরেখা তৈরি না করে এবং কোনও চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসাকে অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে হাউস।’ এদিন প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেন ৩২১ জন আইনপ্রণেতা। আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ২৭৮ জন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট
আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসতে (ব্রেক্সিট) আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। এক গণভোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে গত নভেম্বরে জোটটির সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিলেন থেরেসা। সে ব্রেক্সিট চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদন করানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও গত জানুয়ারির ভোটাভুটিতে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। পরে ব্রিটিশ এমপিরা থেরেসা মে’কে ইইউ’র সঙ্গে নতুন করে আলোচনার সুযোগ দেন। সোমবার (১১ মার্চ) ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর থেরেসা দাবি করেন, পরিকল্পনায় ‘আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক’ পরিবর্তন আনতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার হাউস অব কমন্সে থেরেসার সে সংশোধিত পরিকল্পনাটি নিয়ে আবারও ভোটাভুটি হলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। এ অবস্থায় চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিস্থিতি ঠেকাতে বুধবার আরও একটি ভোটাভুটি করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। রায় আসে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেরেসার সংশোধিত প্রস্তাব পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে,চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিকল্পনা ‘এখন আগের চেয়ে আরও বেশি জরুরি’। বুধবার  চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিকল্পনাও প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় এখন আর্টিক্যাল ফিফটি এর সময়সীমা বাড়িয়ে ব্রেক্সিট বিলম্বিত করার ব্যাপারে ভোটাভুটি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসার আইনি প্রক্রিয়াই হলো আর্টিক্যাল ফিফটি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে,আর্টিক্যাল ফিফটির মেয়াদ বাড়ানোর আগে তাদেরকে ‘একটি নির্ভরযোগ্য পর্যালোচনা’য় যেতে হবে।  

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন,এখন থেরেসা মে’র উচিত সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেওয়া। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটকে আলোচনার টেবিল থেকে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। করবিন জানিয়েছেন,বিকল্প ব্রেক্সিট পরিকল্পনা উপস্থাপন করে যাবে তার দল। তবে লেবার পার্টি ব্রেক্সিট প্রশ্নে আরেকটি গণভোটকে সমর্থন জানাবে কিনা সে ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি তিনি।

থেরেসার প্রথম খসড়া প্রস্তাবে থাকা আইরিশ ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা নিয়ে অনেকের মধ্যে আপত্তি রয়েছে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও আইরিশ রিপাবলিকের মধ্যে দৃশ্যমান সীমান্ত ও কাস্টমস চেক না রাখতে আইরিশ ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মানে হলো ইইউ-এর একক বাজারের কিছু নীতিমালা মেনে চলবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। পাশাপাশি,যুক্তরাজ্য ও ইইউ-এর মধ্যে টেকসই কোনও বাণিজ্য চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কার্যকরভাবে যুক্তরাজ্য শুল্ক সংঘে থাকবে। কনজারভেটিভ পার্টির অনেক আইনপ্রণেতা ও ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি ব্যাকস্টপের বিরোধিতা করছে। কারণ,তাদের আশঙ্কা এ নীতি স্থায়ী রূপ লাভ করতে পারে এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম জারি হতে পারে।

মঙ্গলবার সংশোধিত প্রস্তাব উপস্থাপন করতে গিয়ে থেরেসা দাবি করেন,আইরিশ ব্যাকস্টপ নিয়ে ‘আইনি বাধ্যবাধকতা’ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। সোমবার ইইউ’র নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর থেরেসা মে বলেন, ‘ব্যাকস্টপের ক্ষেত্রে আইনগত পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করেন এমপিরা। আজ আমরা সে আইনগত পরিবর্তনগুলো আনতে সক্ষম হয়েছি। এবার এ সংশোধিত ব্রেক্সিট চুক্তিকে সমর্থন দিতে একত্রিত হওয়ার সময় হয়েছে।’ তবে থেরেসা নতুন করে নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির ৪০ জন এমপিকে সংশোধিত প্রস্তাবের ব্যাপারে রাজি করাতে পারলেও শেষ পর্যন্ত ওই প্রস্তাব পাস করাতে পারেননি।