প্রথমবারের মতো নিজেদের বার্ষিক প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ে স্বীকারোক্তি দিলো কোমল পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বছরে ৩০ লাখ টন প্লাস্টিক উৎপাদন করে তারা। মিনিটে উৎপাদন করা হয় দুই লাখ বোতল।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোকা-কোলার হিসাব অনুযায়ী বছরে ৫০০ মিলিলিটার আকারের বোতলের উৎপাদন সংখ্যা ১০৮ বিলিয়ন, যা বিশ্বে মোট উৎপাদিত বোতলের এক পঞ্চমাংশের বেশি।
এলেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, বিশ্বের ৩১টি প্রতিষ্ঠান বছরে ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক উৎপাদন করে। তবে তাদের সংগঠনের সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ ১৫০টি প্রতিষ্ঠান এখনও তাদের তথ্য সরবরাহ করতে রাজি নয়। এরমধ্যে রয়েছে পেপসি, এইচ অ্যান্ড এম, লরিয়েল, ওয়ালমার্ট, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের মতো প্রতিষ্ঠান। তবে এই অবস্থানের কারণে গতবছর অনেক সমালোচিত হয় তারা।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এলেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন জানায়, প্রতিষ্ঠানগুলো প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে যে ভূমিকা নিয়েছে তার মধ্যেই এই তথ্য উন্মোচন নতুন মাত্রার এক স্বচ্ছতা তৈরি করেছে।
সংগঠনটি বলছে, বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও সরকারগুলোর অনেক করণীয় রয়েছে। ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান যে তথ্য উন্মোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি স্বচ্ছতা তৈরির এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তাদের অনুসরণ করার আহ্বান জানাই।
এখন পর্যন্ত প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধের এই অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছে ১৫০টি প্রতিষ্ঠান। তাদের লক্ষ্য:
- অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক মোড়কজাত বন্ধ করা এবং একবার ব্যবহারের ধারা থেকে বেরিয়ে পুনঃব্যবহারের প্রচলন শুরু করা।
- ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ প্লাস্টিকই যেন পুনরায় ব্যবহার ও রিসাইকেল করা যায় সেটা নিশ্চিতে কোনও পদ্ধতির উদ্ভাবন।
- প্লাস্টিক নিয়ে এমন এক চক্রকার অর্থনীতি তৈরি করতে হবে যেন প্লাস্টিকের পুনরায় ব্যবহার বাড়তে থাকে এবং নতুন মোড়ক সেখান থেকেই তৈরি হয়।
এলেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনের স্যান্ডার ডেফ্রুউত বলেন, সরকার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যে পদক্ষেপের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘এখনও সমস্যার মাত্রা থেকে অনেক দূরে রয়েছেন তারা। বিশেষ করে অপ্রয়োজনীয় বস্তুর নিঃশেষ ও নতুন উদ্ভাবনের মডেলের ক্ষেত্রে। ২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্লাস্টিক দূষণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আমাদের প্রত্যাশার মাত্রাও বাড়তে থাকবে। এছাড়া অঙ্গীকারের চেয়ে বাস্তবায়নই বেশি কঠিন।
প্রথমে যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছিল তারা আরও উন্মুক্ত আচরণ করে। কোকা-কোলা ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তাদের তথ্য প্রকাশ করেছিল। নেসলে জানিয়েছে, বছরে ১৭ লাখ টন প্লাস্টিক প্যাকেট উৎপাদন করে তারা। ইউনিলিভার ৬ লাখ ১০ হাজার টন এবং ডানো ৭ লাখ ৫০ হাজার টন প্লাস্টিকের প্যাকেট উৎপাদন করে।
প্লাস্টিক উৎপাদনকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র দুইটি প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধের এই অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে ইনদোরামা ও বোরিয়ালিস। কোনও এয়ারলাইন্স, ফুড চেইন কিংবা হোটেল এখনও পর্যন্ত এই অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেনি।