উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যেন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া না হয়, সে দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ না করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টি। দলটির নেতা জেরেমি করবিন থেকে শুরু করে ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডায়ান অ্যাবোট পর্যন্ত এ দাবিতে একাত্ম হয়েছেন। তাদের দাবি, মানবাধিকারের সুরক্ষার তাগিদে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যেন কোনওভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ না করা হয়। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এখনও পর্যন্ত এই দাবি মেনে নেওয়ার কোনও ইঙ্গিত দেননি। উল্টো অ্যাসাঞ্জের গ্রেফতারকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। তিনি বলেছেন, ইরাক ও আফগানিস্তানে আমেরিকা যে নৈরাজ্য চালিয়েছে, তার প্রমাণ ফাঁস করার দায়ে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ চাওয়া হচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারের উচিত এর বিরোধিতা করা।
The extradition of Julian Assange to the US for exposing evidence of atrocities in Iraq and Afghanistan should be opposed by the British government.pic.twitter.com/CxTUrOfkHt
— Jeremy Corbyn (@jeremycorbyn) April 11, 2019
লেবার পার্টির নেতা এবং যুক্তরাজ্যের ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডায়না অ্যাবোট বলেছেন, কম্পিউটার হ্যাকার গ্যারি ম্যাককিনোনের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রত্যর্পণ রুখে দিয়েছিলেন থেরেসা মে, সেভাবেই যেন তিনি অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণও রুখে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে মানবাধিকারের সুরক্ষার যুক্তিতে ম্যাককিনোনের প্রত্যর্পণে না করে দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে।
অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনের দাবি, অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের সামিল।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মা ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসাঞ্জের দাবি, 'থেরেসা মে ব্রেক্সিট থেকে নজর ঘোরাতেই আমার সাহসী, মেধাবী, সাংবাদিক ছেলেকে বেআইনিভাবে, কাপুরুষের মতো গ্রেফতার করালো।' ইকুয়েডরের প্রসিডেন্টের উদ্দেশ্যে ক্রিশ্চিয়ানের টুইট, 'লজ্জাজনক! আপনি একজন বিশ্বাসঘাতক! আমার নির্দোষ ছেলের স্বপ্ন আপনার রাতের ঘুম কাড়বে। আমার ছেলেকে যেভাবে অত্যাচার করেছেন, আমি চাই আপনার আত্মাও একইভাবে সেই অত্যাচারের কষ্ট অনুভব করুক।'
এসব বক্তব্য-বিবৃতি-প্রতিবাদে অবশ্য বিচলিত নন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তার ভাষায়, 'এই গ্রেফতার প্রমাণ করলো, যুক্তরাজ্যে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।' ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্টও নিজের সিদ্ধান্তের যুক্তি হিসেবে বলেছেন, 'অ্যাসাঞ্জ আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করেছেন। বাধ্য হয়েই সার্বভৌম সিদ্ধান্ত হিসেবে তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করেছে ইকুয়েডর।'
ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, ৪৭ বছরের এই অস্ট্রেলীয় অ্যাক্টিভিস্টের বিরুদ্ধে কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিপুল পরিমাণ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দেওয়ার ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অবশ্য এই অভিযোগের কথা জানা গিয়েছিল আগেই। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়া জেলা আদালতে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অভিযোগ গঠনের নথি ভুল করে ফাঁস করে ফেলেন প্রসিকিউটররা। এতদিন গোপনে সেই বিচারিক অভ্যুত্থান ঘটানোর প্রচেষ্টা জারি ছিল। স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে অ্যাসাঞ্জ গ্রেফতারের পর আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
২০১০ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দেওয়ার ঘটনায় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে এনে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলেছেন একজন ফেডারেল প্রসিকিউটর। তবে মানবাধিকার প্রশ্নে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত না পাঠানোর বৈশ্বিক দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনসহ দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, আল জাজিরা।