‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’তে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের জন্য যুক্তরাজ্যের বিশেষ প্রকল্প

যুক্তরাজ্যে থেরেসা মে সরকারের অভিবাসন নীতির দরুণ সৃষ্ট ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’তে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলা‌দেশিদের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। ইস্টার্ন আইতে প্রকাশিত এক লেখায় ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথভুক্ত সব দেশের নাগ‌রিক‌ ওই প্রকল্পের আওতায় থাকবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুক্তরাজ্যের পুনর্নির্মাণ ও সেখানকার সম্প্রদায়, সংস্কৃতি ও সমাজকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথভূক্ত দেশগুলো থেকে অভিবাসী হওয়া জনতার অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তারা অনেক অন্যায় ও অবিচারের স্বীকার হয়েছেন। বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে ওইসব অভিবাসীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।  

noname

১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ক্যারিবিয়ানসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যেসব অভিবাসী যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেন, তারাই মূলত ‘উইন্ডরাশ জেনারেশন’ হিসেবে পরিচিত। ‘এমভি এম্পায়ার ইউন্ডরাশ’ নামে একটি জাহাজ নোঙরের মধ্য দিয়ে ওই অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে তারা ‘উইন্ডরাশ জেনারেশন’ পরিচিত পান। ১৯৭১ সালে অভিবাসন আইন প্রণয়নের পরও দশকের পর দশক ধরে তারা যুক্তরাজ্যের বৈধ নাগরিক হিসেবে সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছিলেন। তবে বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকার ২০১২ সালে অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাজ্য থেকে বিতাড়নের লক্ষ্যে অভিবাসন আইনে নজিরবিহীন কড়াকড়ি আরোপ করে। ওই আইনে বাড়িভাড়া, ব্যাংক হিসাব খোলা, চিকিৎসা ও সরকারি সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে অভিবাসনের বৈধতা যাচাই বাধ্যতামূলক করা। ফলে ৪৮ থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করা অভিবাসীদের মধ্যে যারা কখনো যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের আবেদন করেননি কিংবা বৈধতার কোনো কাগজপত্র রাখার প্রয়োজনবোধ করেননি, তাঁরা মহা বিপাকে পড়েন। এ ঘটনাই ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’ আখ্যা পায়।

২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের সেই কঠোর নীতির আওতায়, অভিবাসন বিভাগ অনেককে যুক্তরাজ্য থেকে বিতাড়নের হুমকি দিয়ে চিঠি দেয়। ভুক্তভোগী এসব মানুষের মধ্যে অনেক বাংলাদেশিও রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কমনওয়েলথ সম্মেলনে এসব অভিবাসীর ভোগান্তির জন্য ক্ষমা চান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে আসা সবাইকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।  ১৩ই এপ্রিল ‌ইস্টার্ন আইতে লেখা এক নিবন্ধে সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, "যখন আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোই, তখন আমি অবিলম্বে কমনওয়েলথ নাগরিকদের সাহায্য করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করি। গত বছর এপ্রিল থেকে, ৩৬০০ জনেরও বেশি অভিবাসীকে উইন্ডরাস স্কিমের অধীনে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে। যেখানে ভারত ও পাকিস্তান তথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির ৪শ’রও বেশি নাগরিক রয়েছেন।’

‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’তে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নেওয়া বি‌শেষ প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি তাদের জন্য উন্মুক্ত যারা ১৯৭৩ সালের আগে কমনওয়েলথ দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাস করার জন্য এসেছিলেন এবং ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৮৮ এর আগে যে কোন জাতীয়তা  থেকে এসে যুক্তরাজ্যকে তারা তাদের নিজস্ব বাড়ি বানিয়েছিলেন। সাজিদ জাভিদ নিবন্ধে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,  উইন্ডরাশ প্রজন্মের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের ভোগান্তি ও অত্যাচারের বিপরীতে যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাবেন। এই প্রকল্পে তাদের চাকরি, বাড়ি বা স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা  অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের সুরক্ষার জন্য নিরপেক্ষ আইনজীবীদের দ্বারা তত্বাবধান করা হবে। ভূক্তভূগীদের জন্য এই প্রকল্পের আবেদন প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাজ্যের বাইরে অনলাইন এবং ফ্রি পোস্টের ব্যবস্থাও রয়েছে।

নিবন্ধে সাজিদ জাভিদ আশ্বাস দিয়েছেন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে উইন্ডরাশ প্রজন্মের ক্ষতিগ্রস্ত সবাই এই প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণ পাবেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি বুঝতে পারি যে এই সমস্যাগুলি প্রায়ই ক্যারিবিয়ান সম্প্রদায়ের জন্য অনন্য হিসাবে দেখা হয়। তবে আমি এই জাতীয় বিষয়গুলি সকল জাতীয়তার জন্য উন্মুক্ত করতে চাই। আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, এশিয়ান সম্প্রদায় সহ ব্রিটেনের প্রতিটি সম্প্রদায় যা এই সমস্যাগুলির মুখোমুখি হয়েছে, তারা সকলেই এর ক্ষতিপূরণ পাবে। এই প্রকল্পটি ভুক্তভোগীর পুরো পরিবারের জন্যও উন্মূক্ত থাকবে। তাই সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর সন্তান, নাতি-নাতনি এবং পরিবারের অন্যান্য ঘনিষ্ঠ সদস্যরাও সুবিধা ভোগ করবে।’