সর্বোচ্চ আদালতেও মিয়ানমারের দুই সাংবাদিকের সাজা বহাল

পুলিৎজার পুরস্কার মিললেও মুক্তি মেলেনি মিয়ানমারে কারাবন্দি দুই রয়টার্স সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ও-এর। রোহিঙ্গা গণহত্যার সত্য অনুসন্ধানে গিয়ে উপনিবেশিক যুগের দাফতরিক গোপনীয়তা আইনের বলি হয়ে সাজা ভোগ করছেন ওই দুই সাংবাদিক। হাইকোর্টের রায়ে ৭ বছরের সাজা ঘোষণার পর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন তারা। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) তা খারিজ করে দিয়ে সাজা বহাল রাখেন সুপ্রিম কোটের বিচারপতি সোয়ে নাইং।

ওয়া লোন (বামে) ও কিয়াও সোয়ে ও
রাখাইনের ইন দিন গ্রামে সেনা অভিযানের সময় ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের নাগরিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে ইন দিন ওই গণহত্যার ওপর অনুসন্ধান চালানোর সময় গ্রামবাসীর কাছ থেকে তিনটি ভয়ংকর ছবি সংগ্রহ করেছিলেন। সেগুলোর দুটিতে একটি গণকবরের সামনে ১০ জন রোহিঙ্গা পুরুষকে হাত বাঁধা অবস্থায় হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়। তৃতীয় ছবিতে ওই ১০ জনকেই ওই গণকবরে গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত হয়ে অসাড় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ওই দুই সাংবাদিক তাদের প্রতিবেদন শেষ করার আগেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় পুলিশ সদস্যদের আমন্ত্রণে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন। কয়েকদিনের মাথায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাফতরিক গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার দেখায়।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের বিরুদ্ধে সাত বছর করে কারাদণ্ড ঘোষণা করে ইয়াঙ্গুনের একটি জেলা আদালত। নভেম্বরের শুরুতে ইয়াঙ্গুনের হাইকোর্টে দুই সাংবাদিকের পক্ষে আপিল করেন তাদের আইনজীবীরা। এ বছরের ১১ জানুয়ারি আপিল খারিজ করে দিয়ে নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রাখা হয়। ওই সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছিল। মঙ্গলবারের রায়ে তাদের জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করে সেই আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়।

সাংবাদিক কিয়াও সোয়ে ও’র স্ত্রী চিট সু উইন বিবিসিকে বলেছেন, ‘আদালত আপিল প্রত্যাখ্যান করায় আমি ব্যথিত। যে রায় প্রত্যাশা করেছিলাম তা না পেয়ে খুবই মর্মাহত আমি। কিয়াও এবং আমি ভাল কিছু আশা করেছিলাম।’

দুই সাংবাদিককের আইনজীবী বলেছেন, আদালতের এ রায়ে দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইনজীবী খিন মুয়াং জাও বলেছেন, ‘ওই দুই সাংবাদিকের জন্যই শুধু আমাদের অনুশোচনা হচ্ছে এমন না, অনুশোচনা হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে। রায়ে এসব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

মিয়ানমারের কারাগারে থাকা অবস্থায় রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিক গত ১৫ এপ্রিল পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হন। পুলিৎজার কর্তৃপক্ষ বলেছে, রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যা ও ধারাবাহিকভাবে বহিষ্কার করে বাংলাদেশে পাঠানোর হোতা মিয়ানমারের সামরিক ইউনিট ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী গ্রামবাসীর পরিচয় দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। অত্যন্ত সাহসী সেসব প্রতিবেদনের জন্য ওই দুই সাংবাদিককে কারাগারে যেতে হয়েছে।