২১ এপ্রিলের ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত ৯ আত্মঘাতী হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেছে শ্রীলঙ্কা। বুধবার লঙ্কান পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকেরা তাদের নাম প্রকাশ করেন। সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় হামলাকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে বলেও জানান তিনি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
সেদিন তিনটি বিলাসবহুল হোটেল ও তিনটি গির্জাসহ আরও দুইটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সবকটি স্থানে একজন করে আত্মঘাতী পাঠানো হলেও ব্যতিক্রম ছিল সাংগ্রি লা হোটেল। সেখানে দুজনকে পাঠানো হয়েছিল। এদের একজন হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আইএস সংশ্লিষ্ট ন্যাশনাল তাওহীদ জামাতের নেতা জাহরান হাশিম। অন্যজন ইলহাম আহমেদ।
পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকেরা জানান, শ্রীলঙ্কার খুবই ধনী এক পরিবারের দুই সন্তান দুইটি বিলাসবহুল হোটেলে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। বনেদি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এ পরিবারটি কলম্বোর মসলা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে।
ইলহামের বড় ভাই ইনসাফ আহমেদ চালায় চিনামোন গ্র্যান্ড হোটেলে। কিংসবারি হোটেলের হামলাকারীর নাম মোহাম্মদ আজম মুবারক মোহাম্মদ। আরও এক বিলাসবহুল হোটেলে এক জঙ্গির হামলা চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আবদুল লতিফ নামের ওই জঙ্গি যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশুনা শেষে শ্রীলঙ্কায় বসবাস করছিল।
তিন গির্জায় হামলাকারীরা হচ্ছে আহমেদ মুয়াজ, মোহাম্মদ হাসথুন ও মোহাম্মদ নাসের। সাংগ্রি লা হোটেলের হামলাকারী ইলহাম আহমেদের স্ত্রী ফাতিমা ইলহামও অপর একটি স্থানে হামলা চালান।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা মনে করছেন, ২১ এপ্রিলের ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের নেপথ্যে কোনও বিদেশি ‘হোতা’ রয়েছে। বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সাক্ষাৎকারে সিরিসেনা সন্দেহ জানিয়েছেন, বিদেশি কেউ হামলার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কান নাগরিকদের ‘ছোট একটি দলের’ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে যে, তারা গত ১০ বছর ধরে আইএস-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ ভ্রমণ করেছে। জব্দ করা বিস্ফোরক ও ডিভাইসগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা গেছে, হামলায় ব্যবহৃত বোমাগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি করা।
স্কাই নিউজের পররাষ্ট্রবিষয়ক সম্পাদক দেবোরাহ হায়নেস বলেন: ‘সিসিটিভিতে শনাক্ত হওয়া হামলাকারীরা যেভাবে তাদের মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছিলেন-তা নির্দেশনা পাওয়ার নমুনা কিনা সে ব্যাপারে বিস্তারিত খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।’
শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলাকারীরা অত্যন্ত শিক্ষিত, বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতো এবং ধনী পরিবারের সন্তান। হামলার দিন সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে তাদের মধ্যকার সমন্বয় ও প্রশিক্ষণের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। বিস্ফোরক বহনের জন্য তারা একইরকমের ব্যাগ ব্যবহার করেছে, চেহারা ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহার করেছে বেসবল ক্যাপ। দুইজনকে কাপড়ও পাল্টাতে দেখা গেছে।