দুর্নীতির চক্রের ফাঁদে উ. কোরিয়ার নাগরিকেরা: জাতিসংঘ প্রতিবেদন

 

দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকেরা বঞ্চনা, দুর্নীতি ও নিপীড়ন চক্রের ফাঁদে পড়ছেন বলে জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রতিবেদনে কিম জং উন-এর সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করা তোলা হয়েছে। এই অব্যবস্থাপনার কারণে সেখানকার মানুষ মৌলিক প্রয়োজন মেটাতেও হাসফাঁস করছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দেশত্যাগ করা ২১৪ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি ‘অধিকারের মূল্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রত্যাখান করেছে উত্তর কোরিয়া।noname

বাবার মৃত্যুর পর ২০১১ সালে উত্তর কোরিয়ার নেতা নির্বাচিত হন কিম জং উন। তার আগে থেকেই পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে দেশটি। জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদনে কিম সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করে দেশটি। তবে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগরিকদের খাদ্য নিশ্চিতের চেয়ে সামরিক বাহিনীতে অর্থায়নকেই এখনও অগ্রাধিকার দেয় দেশটি।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মকর্তাদের ঘুষের দাবি মেটাতে গিয়ে নাগরিকদের প্রাত্যহিক টিকে থাকাও কঠিন হয়ে উঠছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০-এর দশকে রাষ্ট্রীয় বিতরণ ব্যবস্থার পতনের পর প্রাত্যহিক রেশন আর পর্যাপ্ত না হওয়ায় দেশটির তিন-চতুর্থাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক বাজারে প্রবেশে বাধ্য হয়েছে। দেশত্যাগকারী এক নাগরিক বলেন, ‘আপনি যদি কেবল রাষ্ট্রের নির্দেশ মনে চলেন তাহলে আপনাকে না খেয়ে মরতে হবে’।

তবে এই অনানুষ্ঠানিক বাজারের বৈধতা না থাকায় নাগরিকদের কাছে ঘুষ দাবি কর্মকর্তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব নাগরিক এই বাজার থেকে অর্থ আয় করতে চান তারা গ্রেফতার ও আটকের মুখে পড়েন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব বাজার থেকে অর্থ উপার্জন করতে চাওয়া নারীরাই বেশি দুর্বল অবস্থায় থাকে। দেশত্যাগকারী আরেক উত্তর কোরীয় নাগরিক বলেন, যার কাছে কোনও কিছু আছে তা ছিনিয়ে নিতে তাকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়ে থাকে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ধারণা, এক দশকের মধ্যে তীব্র খরায় ফসলহানির কারণে দেশটির এক কোটি দশ লাখ মানুষ খাবার সংকটে ভুগছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত মিশেল বাচেলেত বলেন, পারমাণবিক ইস্যুতে ধারাবাহিক মনোযোগের কারণে লাখ লাখ উত্তর কোরীয় নাগরিকের মানবাধিকারের বিপন্ন পরিস্থিতি থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ায় আমি উদ্বিগ্ন।

তবে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন ক্ষুব্ধ হয়ে প্রত্যাখান করেছে উত্তর কোরিয়া। জেনেভায় উত্তর কোরিয়ার মিশন থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলা হয়েছে, এই ধরণের প্রতিবেদন মিথ্যা উদ্ভাবন থেকে বেশি কিছু নয়...সবসময়ই তারা তথাকথিত দেশত্যাগীদের বর্ণনার ভিত্তিতে এসব প্রতিবেদন তৈরি করে। এসব দেশত্যাগীরা জীবিকা উপার্জনের জন্য বা প্রলোভনে পড়ে বা কারাগার থেকে মুক্তি পেতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে’।