আর্তমানবতার সেবায় ব্রিটিশ বাংলাদেশি তরুণদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

মাদকাসক্তি, গ্যাং সংস্কৃতি আর সংঘাত যখন পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার তারুণ্যকে গ্রাস করছে, ঠিক সেই সময়ে সেখানকার কিছু তরুণ নেমেছে অসহায়দের জন্য তহবিল সংগ্রহে। ভিক্ষার থালা হাতে নয়, ওই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণরা গাড়ি ধোয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ সংগ্রহ করছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য। আয়োজকরা বলছেন, পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে অসহায়দের সেবায় এগিয়ে আসতে চাইছে তারা। কমিউনিটি নেতারা বলছেন, বাংলাদেশি তরুণদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের নজির সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।

noname

টাওয়ার হ্যামলেটস-এর বাংলাদেশি তরুণদের একটা বড় অংশ জড়িয়ে পড়েছে মাদকাসক্তিতে। পাড়ায় পাড়ায় গ্যাং সংস্কৃতির আধিপত্য চরম পর্যায়ে। সংঘাত কিংবা ছুরিকাঘাত নিত্য দিনের ঘটনা। তবে এর মধ্যেই সেখানকার ২০ থেকে ৩০ জন তরুণের একটা দল নেমেছে আর্তমানবতার সেবায়। ফিলগেট ব্রাদারস নামের এক সংগঠনের ব্যানারে তারা গাড়ি ধুয়ে তহবিল সংগ্রহ করছে, যা গরিবদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। অন্যদেরকেও তারা উদ্বুদ্ধ করছে তাদের এই শুভ উদ্যোগে সামিল হতে। কেবল গাড়ি ধোয়া নয়, অনলাইনে পেজ খুলে এবং রাস্তায় তাঁবু টানিয়ে তারা চকলেট, কেক ও বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস বিক্রি করছে। সেই অর্থও জমা হচ্ছে অসহায়দের তহবিলে।

noname

২০১৮ সালের মে মাসে আত্মপ্রকাশ করে ফিলগেট ব্রাদারস নামের সংগঠনটি। উদ্দেশ্য, টেকসই সহায়তা প্রদানের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো। অসহায় মানুষ যেন তাদের  জীবনের দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায় থেকে মুক্তি পায়  এবং দরিদ্ররা যেন তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে সংগঠনের তরুণরা। এরইমধ্যে বাংলাদেশের দরিদ্র ও প্রতিবন্ধীদের একাংশ তাদের কাছে সহায়তা পেয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও  মিয়ানমার,  সিরিয়া ও কেনিয়ার অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অপরাপর সংগঠনগুলোর মতো তাদের নির্দিষ্ট কোনও দলনেতা নেই।

nonameসংগঠনের  একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই নেতা এবং প্রত্যেকেই সমান দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন।  তিনি জানিয়েছেন,  এ বছর তারা ৩০ হাজার পাউন্ড সংগ্রহের লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে। আগামী ২ জুন সংগঠনটি বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পূর্ব লন্ডনের রমফোর্ড স্ট্রিটে গাড়ি ধোয়ার কর্মসূচি পালন করবে। আয়োজকদের পক্ষে সালেহ আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নিজেরা কিছু একটা করতে চাই। নিজেদের শ্রম দিয়ে আয় করা অর্থ দিয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।’

noname

ভিক্ষা করার মতো করে চ্যারিটি সংগ্রহের চিরাচরিত দৃশ্যের বাইরে এসে তরুণদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ইতোমধ্যেই কমিউনিটির মানুষের নজর কাড়তে শুরু করেছে। অন্যরা যেখানে চ্যারিটি ডিনারের নামে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে, টেলিভিশনের পর্দায় চ্যারিটির নামে যেখানে ব্যবসায়িক ধান্দা মেটানোর মতো ঘটনাও ঘটছে, সেখানে পরিশ্রমের মাধ্যমে অসহায়দের জন্য তহবিল সংগ্রহের এই উদ্যোগকে পরিবর্তনের বার্তা হিসেবে নিচ্ছে তারা।
nonameএমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কমিউনিটি নেতা ও লেখক স‌লি‌সিটর বিপ্লব কুমার পোদ্দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মনে করি তরুণদের এই উদ্যোগ কমিউনিটির জন্য এক ইতিবাচক নজির সৃষ্টি করবে। অন্য যারা চ্যারিটির নামে তহবিল সংগ্রহে যুক্ত আছে, এই তরুণরা তাদের জন্য উদাহরণ হিসেবে হাজির হবে।’ ফ্রেন্ডস হেল্পিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান দিপু বলেন, 'ফিলগেইট ব্রাদারস সংগঠনটির এমন উদ্যোগ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে তরুণ প্রজন্মকে উদ্ভুদ্ধ করছে। ভবিষ্যতে আমরাও এমন কর্মসূচী নেওয়ার চিন্তা করছি'।