উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমা চাইলেন হংকং-এর চীনপন্থী শাসক

লাখো মানুষের উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমা চাইলেন হংকং-এর চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যাম। এর আগে তিনি বিতর্কিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিতের ঘোষণা দিলেও আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় বিক্ষোভকারীরা। রবিবারের বিক্ষোভে ক্যারি ল্যামের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা বিতর্কিত বিলটি স্থায়ীভাবে বাতিলের দাবিতে আওয়াজ তোলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক বিবৃতিতে হংকং-এর বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ক্যারি ল্যাম। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

nonameএর আগে কথিত ওই অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলে কোনও কাটছাঁট করা হবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন ক্যারি ল্যাম। তবে গণআন্দোলনের মুখে বিলটি স্থগিতের পর উল্টো জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন তিনি।

মূলত চীন ও তাইওয়ানে অপরাধী প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত একটি বিলের বিপক্ষে হংকংজুড়ে এই গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীদের মূল ক্ষোভ চীনের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে। বেইজিংয়ের দুর্বল আইন এবং মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে সেখানে কাউকে ফেরত পাঠানো নিরাপদ মনে করছেন না হংকংয়ের সাধারণ মানুষ। তারা মনে করছেন, বিলটি পাস হলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে।

প্রস্তাবিত বিলে সন্দেহভাজন অপরাধীকে চীন ও তাইওয়ানে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করা হয়েছে। কিন্তু চীন এই আইনের সুবিধা নিয়ে হংকংয়ের বাসিন্দাদের ওপর খবরদারি বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা থাকায় বিষয়টি সেখানে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দারা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।noname

২০১৮ সালের এক ঘটনার প্রেক্ষিতে এই বিলটি তৈরি করা হয়। তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে হংকংয়ের বন্দি বিনিময়ের কোনও চুক্তি না থাকায় সেই ব্যক্তিকে এখন তাইপেতে বিচারের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। কিন্তু এখন তাইওয়ানও জানিয়েছে, সন্দেহভাজন সেই খুনের মামলার আসামিকে ফেরত নিতে চায় না তারা। কেননা এটি এমন এক উদাহরণ তৈরি করবে যা চীন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে।

কথিত এই অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে গত ৯ জুন রাতে অঞ্চলটির রাজপথে নামে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ঢল টানা কয়েক দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। অঞ্চলটির সরকারি অফিসে যাওয়ার প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করে রাখে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। ব্যাপক গণআন্দোলনের তীব্রতায় শনিবার বিলটির কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।noname

হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল অবধি অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দিয়েছে দেশটি। ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার পর লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষে ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই অঞ্চলটি চীনের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছিল।

হংকংয়ের জনসংখ্যা প্রায় ৭৪ লাখ হলেও, ১২শ’ জনের একটি বিশেষ কমিটি নেতা বাছাইয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান। অঞ্চলটির নেতা বা প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যামের দাবি, হংকং যে বিশেষ স্বাধীনতা উপভোগ করে, নতুন আইনের ফলে তার কোনও ক্ষতি হবে না। তবে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা বলছেন, আইনটির মাধ্যমে অঞ্চলটির রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে বেইজিং। এর প্রতিবাদ জানাতেই তারা রাজপথের বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইতোপূর্বে ক্যারি ল্যাম দাবি করেন, এই আইনের প্রয়োজন রয়েছে এবং এতে মানবাধিকারের রক্ষাকবচগুলো যুক্ত করা হয়েছে। তার দাবি, প্রস্তাবিত আইনটি বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে তোলা হয়নি। বিবেকের তাড়নায় এবং হংকংয়ের প্রতি অঙ্গীকার থেকেই এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত গণবিক্ষোভের মুখে নিজের অনড় অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হন তিনি। সূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান।