স্কুল বাস চালককে মারধর সেনাসদস্যদের, শিশুদের কান্না

স্কুল বাসের চালককে মারধর করছে সেনাসদস্যরা। আর সেটি দেখে কাঁদছে শিশুরা। ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এমন একটি ভিডিও আলোচনার ঝড় তুলেছে। অধিকৃত কাশ্মিরের শোপিয়ান জেলার ওই ভিডিও দেখে অনেকেই নিন্দা করছেন সেনাবাহিনীর ‘স্বেচ্ছাচারী' আচরণের। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।14

ওই ঘটনার সময় বাসে ৫০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের দাবি, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এক প্রতিবাদী ছাত্র জানায়, ‘আমরা একটা ট্র্যাফিক জ্যামে ফেঁসেছিলাম। হঠাৎ সেখানে সেনাসদস্যদের একটি বহর এসে পৌঁছায়। তারা আমাদের ড্রাইভার আংকেলকে মারধর করে।’

মারধরের শিকার ওই চালকের নাম গুলজার আহমেদ। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথায় আঘাত লেগেছে।

এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আমি স্কুল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে দেখা করেছি। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা দিয়েছি। আমরা এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি।’

শোপিয়ান জেলায় কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামীদের প্রভাব বলয় রয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেখানে লোকজনের চলাচলে নানা বিধিনিষেধ জারি রেখেছে। রয়েছে নানা ট্রাফিক নিষেধাজ্ঞা। যখন সেনা কনভয় রাস্তা দিয়ে যায় তখন কোনও সাধারণ যানবাহনের সেখানে চলাচলের সুযোগ নেই। গত ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার পর থেকে এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরও বাড়ানো হয়।

ওই ঘটনার পর থেকেই রাজ্য প্রশাসন জম্মু-শ্রীনগর সড়কে সপ্তাহে দুই দিন সাধারণ যানবাহন চলাফেরার জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়। তবে গত মাসে ওই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। তবে এখনও সামরিক বহর গেলে সাধারণ যানবাহনকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়।

কাশ্মিরে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কেউ কেউ সরাসরি স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত। কেউ কেউ আবার ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ’ মোকাবিলায় অঞ্চলটিকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে। ইতিহাস পরিক্রমায় ক্রমেই সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইসলামিকরণ হয়েছে। এখন সেখানকার বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর মধ্যে হিজবুল মুজাহিদীন সবচেয়ে সক্রিয়। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মিরের জাতিমুক্তি আন্দোলনকে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী তৎপরতা থেকে আলাদাভাবে দেখে না। সন্দেহভাজন জঙ্গি নাম দিয়ে বহু বিদ্রোহীর পাশাপাশি বেসামরিকদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে।

সোমবার এমন সময়ে কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর কনভয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটলো, যার মাত্র কিছুদিন আগেই ঝাড়খণ্ডে রক্তক্ষয়ী মাওবাদী হামলার কবলে পড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। গত ১২ জুন কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ)-এর টহল দলের ওপর হামলায় অন্তত পাঁচ জওয়ান নিহত হন।