যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট, ক্ষুব্ধ চীন

চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইন-ওয়েন। সোমবার তাইওয়ানের পক্ষ থেকে চারদিনের এ সফরের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর এতেই বেজায় চটেছে চীন। ইতোমধ্যেই সাই ইন-ওয়েনকে প্রবেশের অনুমতি না দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।

nonameবেইজিং-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাইওয়ান ইস্যু হচ্ছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং শুয়াং বলেন, সাই ইন-ওয়েনকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার না দিতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে চীন।

বেইজিং-এ এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, তাইওয়ান সংক্রান্ত বিষয়াদি সচেতনভাবে ও যথাযথভাবে দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা যাতে বিনষ্ট না হয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ান ও চীন উভয়েই চীনকে নিজেদের দেশ বলে  মনে করে। ফলে উভয় দেশেই একে অপরের ভূখণ্ডের মালিকানা দাবি করে। এতেই সমস্যার শুরু। যা কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ বিরোধের সূত্রপাত শুরু হয় ১৯২৭ সালে। যখন চীনজুড়ে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মাও জে দংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা ১৯৪৯ সালে জাতীয়তাবাদী সরকারকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধের অবসান হয়।

ওই সময় জাতীয়তাবাদী নেতারা পালিয়ে তাইওয়ান যান। এখনও তারাই তাইওয়ান নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাথমিকভাবে ওই সময় যুদ্ধ বন্ধ হলেও উভয় দেশই নিজেদের চীনের দাবিদার হিসেবে উত্থাপন শুরু করে। তাইওয়ানভিত্তিক সরকার দাবি করে, চীন কমিউনিস্টদের দ্বারা অবৈধভাবে দখল হয়েছে। আর বেইজিংভিত্তিক চীনের সরকার তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে।

এ বিরোধের জের ধরে বলা যায়, চীনের গৃহযুদ্ধ সম্পূর্ণ অবসান হয়নি আজও। তার ওপর তাইওয়ানের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিক অব চায়না। কমিউনিস্ট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন চীন সরকারের নাম পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। এ বিরোধটি স্নায়ুযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারকে চীনের বিধিসম্মত সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের জাতীয়তাবাদীদের স্বীকৃতি দেয়। ওই সময় এমনকি জাতিসংঘে চীনের আসনগুলো ছিলো তাইওয়ানের দখলে।

১৯৭০ দশকে এসে বিশ্ব বিভক্ত চীনকে গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে আসন ফিরে পায় চীন। তার পরের বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম. নিক্সন চীন সফর করেন। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পরিবর্তে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বের অপর দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।