হংকং-এর রাজপথে শনিবার চীনা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। অঞ্চলটির সীমান্তবর্তী একটি শহরে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তারা নাগরিকদের চীনে পাঠাতে বিতর্কিত প্রত্যাবাসন বিল নিয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের সমালোচনা করেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
এর আগে গত ৭ জুলাই চীনা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় একটি অঞ্চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আন্দোলনকারীরা। চীনবিরোধী এ আন্দোলনের সূত্রপাত মূলত কথিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল নিয়ে। পরে লাখো মানুষের উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে বিলটি থেকে পিছু হটতে বাধ্য হন হংকং-এর চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যাম। প্রথমে বিলের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিতের ঘোষণা দিলেও পরে আন্দোলনের তীব্রতায় এটি বাতিলের ঘোষণা দেন তিনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক বিবৃতিতে ক্ষমা চান হংকং-এর বাসিন্দাদের কাছে।
এর আগে কথিত ওই অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলে কোনও কাটছাঁট করা হবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন ক্যারি ল্যাম। তবে গণআন্দোলনের মুখে বিলটি স্থগিতের পর উল্টো জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন তিনি।
মূলত চীন ও তাইওয়ানে অপরাধী প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত একটি বিলের বিপক্ষে হংকংজুড়ে এই গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীদের মূল ক্ষোভ চীনের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে। বেইজিংয়ের দুর্বল আইন এবং মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে সেখানে কাউকে ফেরত পাঠানো নিরাপদ মনে করছেন না হংকংয়ের সাধারণ মানুষ। তারা মনে করছেন, বিলটি পাস হলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে।
প্রস্তাবিত বিলে সন্দেহভাজন অপরাধীকে চীন ও তাইওয়ানে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করা হয়েছে। কিন্তু চীন এই আইনের সুবিধা নিয়ে হংকংয়ের বাসিন্দাদের ওপর খবরদারি বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা থাকায় বিষয়টি সেখানে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দারা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
২০১৮ সালের এক ঘটনার প্রেক্ষিতে এই বিলটি তৈরি করা হয়। তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে হংকংয়ের বন্দি বিনিময়ের কোনও চুক্তি না থাকায় সেই ব্যক্তিকে এখন তাইপেতে বিচারের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। কিন্তু এখন তাইওয়ানও জানিয়েছে, সন্দেহভাজন সেই খুনের মামলার আসামিকে ফেরত নিতে চায় না তারা। কেননা এটি এমন এক উদাহরণ তৈরি করবে যা চীন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে।
কথিত এই অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে গত ৯ জুন রাতে অঞ্চলটির রাজপথে নামে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ঢল টানা কয়েক দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। অঞ্চলটির সরকারি অফিসে যাওয়ার প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করে রাখে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। ব্যাপক গণআন্দোলনের তীব্রতায় কর্তৃপক্ষ বিলটির কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দিলেও হংকংয়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও চীনবিরোধী মনোভাব করছে। শনিবারের বিক্ষোভ তারই প্রমাণ।
হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল অবধি অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দিয়েছে দেশটি। ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার পর লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষে ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই অঞ্চলটি চীনের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। হংকংয়ের জনসংখ্যা প্রায় ৭৪ লাখ হলেও, ১২শ’ জনের একটি বিশেষ কমিটি নেতা বাছাইয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান। সূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান।