তাইওয়ানে মার্কিন অস্ত্র, উপকূলে মহড়া চীনের

তাইওয়ান সংলগ্ন চীনের দক্ষিণপূর্ব সমুদ্র উপকূল এলাকায় বিমান ও নৌ মহড়া চালিয়েছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নতুন করে তাইওয়ানের ২২০ কোটি ডলারের অস্ত্র কেনা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই এ মহড়ায় অংশ নিলো চীনের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।

13চীনের দক্ষিণপূর্ব উপকূলীয় এলাকা বেইজিং-এর জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কেননা এ উপকূলেই তাইওয়ান প্রণালীর অবস্থান। এ প্রণালীর এক পাশে তাইওয়ান আর অন্য পাশে চীনের দক্ষিণপূর্ব উপকূল। ফলে অঞ্চলটি চীনের সবচেয়ে সংবেদনশীল এলাকাগুলোর একটি।

রবিবার চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এ মহড়া চালানো হয়েছে। তবে বিবৃতিতে মহড়ার বিস্তারিত জানানো হয়নি। অবশ্য একে নিয়মিত বার্ষিক মহড়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ান ও চীন উভয়েই চীনকে নিজেদের দেশ বলে  মনে করে। ফলে উভয় দেশেই একে অপরের ভূখণ্ডের মালিকানা দাবি করে। এতেই সমস্যার শুরু। যা কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ বিরোধের সূত্রপাত শুরু হয় ১৯২৭ সালে। যখন চীনজুড়ে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মাও জে দংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা ১৯৪৯ সালে জাতীয়তাবাদী সরকারকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধের অবসান হয়।

ওই সময় জাতীয়তাবাদী নেতারা পালিয়ে তাইওয়ান যান। এখনও তারাই তাইওয়ান নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাথমিকভাবে ওই সময় যুদ্ধ বন্ধ হলেও উভয় দেশই নিজেদের চীনের দাবিদার হিসেবে উত্থাপন শুরু করে। তাইওয়ানভিত্তিক সরকার দাবি করে, চীন কমিউনিস্টদের দ্বারা অবৈধভাবে দখল হয়েছে। আর বেইজিংভিত্তিক চীনের সরকার তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে।

এ বিরোধের জের ধরে বলা যায়, চীনের গৃহযুদ্ধ সম্পূর্ণ অবসান হয়নি আজও। তার ওপর তাইওয়ানের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিক অব চায়না। কমিউনিস্ট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন চীন সরকারের নাম পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। এ বিরোধটি স্নায়ুযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারকে চীনের বিধিসম্মত সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের জাতীয়তাবাদীদের স্বীকৃতি দেয়। ওই সময় এমনকি জাতিসংঘে চীনের আসনগুলো ছিলো তাইওয়ানের দখলে।

১৯৭০ দশকে এসে বিশ্ব বিভক্ত চীনকে গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে আসন ফিরে পায় চীন। তার পরের বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম. নিক্সন চীন সফর করেন। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পরিবর্তে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বের অপর দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়। সূত্র: রয়টার্স, পার্স টুডে, বিবিসি।